কয়লা ব্যবসায়ী থেকে 'বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক'

ভুয়া চিকিৎসক এ কে আজাদ
ভুয়া চিকিৎসক এ কে আজাদ

এসএসসি পাস করে বাবার সঙ্গে কয়লা ব্যবসা শুরু করেন এ কে আজাদ। এক যুগের বেশি সময় কয়লা ব্যবসা করে পেশা পরিবর্তন করেন। নেমে পড়েন ওষুধ ব্যবসায়। কয়েক বছর ওষুধের দোকান চালিয়ে শেষে নিজেই চিকিৎসক বনে যান। তা–ও যেনতেন চিকিৎসক নন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাঁর নামের সাইনবোর্ডে শোভা পায় চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি, মা ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ।

টানা ১০ বছর এভাবে চিকিৎসা দেওয়ার পর অবশেষে আজ শনিবার বিকেলে ভোক্তা অধিকার আইনে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে ধরা খান ভুয়া বিশেষজ্ঞ। তাঁকে ৫০ হাজার অর্থদণ্ড অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিমাদ্রি খীসা।

কয়লা ব্যবসায়ী থেকে পাঁচটি রোগের বিশেষজ্ঞ বনে যাওয়া এই ভুয়া চিকিৎসকের চেম্বার কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের বাজার এলাকার মোস্তফা ফার্মেসি নামের একটি দোকানে।

আজাদের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে। গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পাস করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি কলেজে ভর্তি হন। সে সময় তাঁর বাবা কয়লা ব্যবসা করতেন। একপর্যায়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে বাবার ব্যবসায় যোগ দেন। এক যুগের বেশি সময় পর তাঁর মনে হয়েছে পেশা বদল প্রয়োজন। তখন তিনি ভৈরবে চলে আসেন এবং বাজার এলাকায় ওষুধের দোকান দেন। তাঁর দোকানের নাম ছিল আজাদ মেডিকেল হল। পাঁচ বছর ব্যবসা চালানোর পর ভাড়া জটিলতায় তাঁকে ঘর ছেড়ে দিতে হয়। এরপর তিনি বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে বাজারের একটি দোকানে সাত বছর চিকিৎসাসেবা দেন। তিন বছর আগে যোগ দেন মোস্তফা ফার্মেসিতে। তাঁর ভিজিট ছিল সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা।

ভৈরবে বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানির ভোগ্যপণ্য মোড়কজাত হচ্ছে—এমন অভিযোগে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ ইউনিট বিকেল থেকে ভৈরব বাজারে অভিযান চালায়। নকল ওষুধ রয়েছে কি না জানতে মোস্তফা ফার্মেসিতে অভিযান চালানোর সময় কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিমাদ্রি খীসা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রমাণিত হয়েছে, আজাদ কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন। এমনকি তিনি এমবিবিএস পাস করা কেউ নন। একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা করার কথা জানিয়েছেন। তা–ও সনদ দেখাতে পারেননি।

হিমাদ্রি খীসা বলেন, বিশেষজ্ঞ ভেবে যেসব রোগী তাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন, প্রত্যেকে প্রতারিত হয়েছেন। এ জন্য অর্থদণ্ডের পাশাপাশি সংশোধনের জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে।

দোকানটির মালিক মো. আরিফ। চেম্বার স্থাপনের আগে সনদ পরীক্ষা করা হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগে দেখেছি, অন্য একটি ফার্মেসিতে বসে চিকিৎসা দিয়েছেন। সমস্যা হয়নি। সেই কারণে আমিও দিয়েছিলাম। সনদ দেখতে চাইলে দেখাব দেখাব করে এতটা সময় পার করে দিয়েছেন।’

প্রতারণার বিষয়ে আজাদ বলেন, ‘কয়লা ব্যবসা ভালো যাচ্ছিল না। সে কারণে ওষুধ ব্যবসায় আসি। ফার্মেসিতে থাকা অবস্থায় চিকিৎসার ওপর একটি ডিপ্লোমা কোর্স করে রোগী দেখা শুরু করি।’ বিশেষজ্ঞ বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘আসলে সাইনবোর্ড তো আর আমি লিখি না। যিনি লিখেছেন তিনি ভুল করে লিখেছেন।’ এত বছরেও সংশোধন করলেন না কেন, এমন প্রশ্নে বিব্রতবোধ করেন তিনি।

একই দিনে অভিযানে আরও চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। খাবারে ভেজাল ও নকল ওষুধ রাখার অপরাধে শহরের আইস কোং বেকারি, ফুলকলি, রিয়াজ ফার্মেসি ও মোস্তফা ফার্মেসি মালিককে এই দণ্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে আইস কোং বেকারির মালিককে ১০ হাজার, ফুলকলি বেকারির পরিচালককে ২০ হাজার, রিয়াজ ফার্মেসি মালিককে ৫ হাজার ও মোস্তফা ফার্মেসিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক রুহুল আমিন, পৌর স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাছিমা বেগম, ভৈরব ঔষধ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি চন্দন কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক আক্রাম হোসেন চৌধুরী।