সীমান্তে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে 'অচলায়তন' কর্মসূচি

সীমান্তে জনসচেতনতায় গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘অচলায়তন’ কর্মসূচি পালন। জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টে। ছবি: প্রথম আলো
সীমান্তে জনসচেতনতায় গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘অচলায়তন’ কর্মসূচি পালন। জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টে। ছবি: প্রথম আলো

সুউচ্চ পাহাড়গুলো ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি এলাকার। পাহাড়ের পাদদেশ পুরোটা বাংলাদেশের জাফলং। হাঁটুসমান পানিতে নেমে হাতে হাত ধরে দাঁড়ালেন একদল তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পরনে তাঁদের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে টি-শার্ট। একপর্যায়ে তাঁদের সঙ্গে দাঁড়ালেন উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারাও। হাত তুলে একবার ভারতের দিকে, আরেকবার বাংলাদেশের দিকে মুখ করে দাঁড়ান তাঁরা। এভাবে প্রায় আধঘণ্টা অবস্থান করে সীমান্ত আইন মেনে চলতে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

কর্মসূচির নাম ছিল ‘অচলায়তন’। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ শনিবার বিকেলে জাফলংয়ে সীমান্তের শূন্যরেখার (জিরো পয়েন্ট) কাছে এ কর্মসূচি পালিত হয়। করোনাকালে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সীমান্তে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্ত আইন সম্পর্কে জনসচেতনতায় ব্যতিক্রমী এ কর্মসূচি পালিত হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, করোনাকালে সিলেটের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি হতাহতের প্রথম ঘটনা ঘটে জাফলংয়ে। একজন পাথরশ্রমিক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে নিহত হন। এরপর গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, কলুমছড়া ও পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জের উৎসা সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে আরও চার বাংলাদেশি নিহত ও আটজন আহত হন। এই হতাহতের ঘটনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সীমান্তের মানুষজনকে সচেতন করতে ‘সীমান্তে অচলায়তন’ নামের কর্মসূচি পালন করা হয়।

বাংলাদেশের পতাকার আদলে টি-শার্ট পরা শতাধিক তরুণ বিকেল চারটায় জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টে হাঁটুপানিতে নেমে দুই হাত তুলে সীমান্তে সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরির পক্ষে নীরব এক মতামত ব্যক্ত করেন। এরপর জনসচেতনতামূলক সভা হয়।

সভায় গোয়াইনঘাটের ইউএনও মো. নাজমুস সাকিব, গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক, গোয়াইনঘাট থানার ওসি আবদুল আহাদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুলতান আলী, সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু কাওসার, মৎস্য কর্মকর্তা আরেফিন ফাহিম, শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল আলী, রুস্তমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন সিহাব, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ মতিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সভা শেষে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার সীমান্ত এলাকার তিনটি ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিনমজুরশ্রেণির মানুষজনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকা ধরে ৩০০ জনের মধ্যে বিশেষ ত্রাণসহায়তা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করা হয়।

অচলায়তন কর্মসূচি পালন শেষে সভায় বক্তব্য দেন ইউএনও মো. নাজমুস সাকিব। ছবি: প্রথম আলো
অচলায়তন কর্মসূচি পালন শেষে সভায় বক্তব্য দেন ইউএনও মো. নাজমুস সাকিব। ছবি: প্রথম আলো

ইউএনও নাজমুস সাকিব বলেন, সীমান্ত এলাকায় সীমান্ত আইন সম্পর্কে জেনে, না জেনে অনেকে চলাচল করেন। এই চলাচলের ক্ষেত্রে জনসচেতনতার মাধ্যমে ‘অচলায়তন’ তৈরি করতেই এই নামে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তিনি বলেন, কর্মসূচিতে একাত্ম হওয়া সবাই সীমান্ত আইন মেনে চলাচল করতে সচেতনতা সৃষ্টিতে নিয়মিত প্রচার করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি উপজেলার যে তিনটি ইউপির নয়টি ওয়ার্ড পড়েছে, সেখানে বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি বন্যাসহ দুর্যোগকালীন সরকারি ত্রাণসহায়তার বাইরে বিশেষ ত্রাণসহায়তা চালু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ কেজি করে চাল ৯০০ জনকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম দফায় ৩০০ জন ত্রাণসহায়তা পেলেন।