কালিয়াকৈরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় একটি জুতা তৈরির কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ। আজ রোববার দুপুরে তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় একটি জুতা তৈরির কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ। আজ রোববার দুপুরে তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো

চলতি মাসের বেতন, ঈদের ছুটি বৃদ্ধি ও হাজিরা বোনাসের দাবিতে আজ রোববার সকাল থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় একটি জুতা তৈরির কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় শ্রমিকেরা দাবি আদায়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন এবং বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শ্রমিক-পুলিশ পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।

শিল্প পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, হরিণহাটি এলাকার অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড নামের জুতা তৈরির একটি কারখানার শ্রমিকেরা প্রতিদিনের মতো আজ সকাল থেকে কাজে যোগদান করেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন ঈদ উপলক্ষে তাঁদের চার দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানার পর সব শ্রমিকের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাঁরা ঈদে ১০ দিনের ছুটি, চলতি মাসের বেতন, হাজিরা বোনাস ও ব্যবহার খারাপের অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে কাজ ফেলে কারখানার সামনে অবস্থান নেন।

খবর পেয়ে থানার পুলিশ, শিল্প পুলিশ সকাল নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে শ্রমিকেরা কারখানা ভাঙচুর চালান। পরে তাঁরা পাশের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা মহাসড়কে থাকা ট্রাকসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই মহাসড়কে প্রায় সাত ঘণ্টা যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রী, গরু ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকদের। একপর্যায়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সমাধান করার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নেন। শ্রমিকেরা সড়ক থেকে চলে গেলে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে ধীরে ধীরে যান চলাচল শুরু করে।

শ্রমিকেরা জানান, ৪ দিনের বদলে ১০ দিনের ছুটি, চলতি মাসের বেতন ও হাজিরা বোনাসের টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা ও পুলিশের খারাপ আচরণের কারণে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। তবে দাবি মেনে না নিলে তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. মিজানুর রহমান বলেন, তাঁদের কারখানায় কখনোই বেতন বা কোনো কিছুর দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হয় না। তবে এবার শ্রমিকেরা ছুটি বৃদ্ধি ও চলতি মাসের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের দাবির বিষয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে তাঁরা আন্দোলন করেন এবং মহাসড়ক অবরোধ রেখে যানবাহন ভাঙচুর করেন। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার জানান, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নিলে শ্রমিকেরা শান্ত হয়ে যাঁর যাঁর বাড়ি চলে গেছেন।