পটুয়াখালীতে পশুর সরবরাহ বেশি, ক্রেতা কম

হাটে প্রচুর গরু এসেছে, কিন্তু ক্রেতা ও দাম দুটোই কম। বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর গলাচিপার বাদুরা হাটে। ছবি: শংকর দাস।
হাটে প্রচুর গরু এসেছে, কিন্তু ক্রেতা ও দাম দুটোই কম। বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর গলাচিপার বাদুরা হাটে। ছবি: শংকর দাস।

‘বিশাল গরু-ছাগলের হাট, বিশাল গরু-ছাগলের হাট’ জেলা শহরসহ গ্রামগঞ্জে মাইকিং করে প্রচারণা চলছে। দিন যতই এগিয়ে আসছে পটুয়াখালীর বিভিন্ন হাটে গবাদিপশুর সরবরাহ বাড়ছে। কিন্তু ক্রেতা তেমন না থাকায় দাম উঠছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও গরু পালনকারীরা।

পটুয়াখালী শহরের কালিকাপুর স্বাধীনতা সড়ক এলাকার বিসমিল্লাহ ডেইরি ফার্মের পরিচালক ছিদ্দিক গাজী নিজের খামারে ৩০টি ষাঁড় লালন–পালন করেছেন। ভেবেছিলেন কোরবানির হাটে গরুগুলো বিক্রি করে ভালো আয় করবেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে হাটে নিয়ে গেলেও ক্রেতা গরুর দাম কম বলায় বিক্রি করতে পারছেন না।

ছিদ্দিক গাজী বলেন, প্রায় সাড়ে চার মাস আগে গ্রামের বিভিন্ন হাট থেকে এই ৩০টি গরু ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। গরুগুলো তাঁর খামারে লালন–পালন করে কোরবানির হাটে তোলার জন্য প্রস্তুত করেছেন। এতে তাঁর ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে গেলে ক্রেতারা দাম কম বলছেন। তাই বিক্রি করতে পারেননি গরুগুলো।

ছিদ্দিক গাজী আরও জানান, গত কোরবানির হাটে যে গরু ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এ বছর দাম বলছে ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা। বাজার এই অবস্থা থাকলে এ বছর তাঁর কমপক্ষে আট লাখ টাকা লোকসান হবে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত পটুয়াখালীর বড় পশুর হাট বাদুরা হাট, বাঁধঘাট, সেহাকাঠি, গলাচিপা, মৌকরন হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটগুলোতে প্রচুর গরু উঠেছে। কিন্তু ক্রেতা কম। হাটের ইজারাদার ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটে যে পরিমাণ পশুর সরবরাহ, সে তুলনায় ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনা হচ্ছে কম। ক্রেতারাও দাম বলছেন কম। এতে খামারি ও গরু পালনকারী অনেককেই লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার গলাচিপার আমখোলা ইউনিয়নের বাদুরা হাটে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে গরু বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আউলিয়াপুর গ্রামের খালেক প্যাদা জানান, এর আগের হাটে তাঁর গরুর দাম উঠেছিল ৪০ হাজার টাকা। এই হাটে একই গরুর দাম ৩৫ হাজার টাকার বেশি উঠছে না। এ ছাড়া এই হাটে গরুর সরবরাহ প্রচুর।

সদর উপজেলার বাঁধঘাট হাটে দেখা যায়, এক ব্যাপারী কুষ্টিয়া থেকে ট্রাকে করে গরু এনে হাটে তুলছেন। শাহীন ব্যাপারী নামের ওই ব্যক্তি বলেন, কুষ্টিয়ার আলমপুর এলাকার বাইলাপাড়া থেকে ২০টি ষাঁড় কিনে পটুয়াখালী নিয়ে এসেছেন। এখানে পৌঁছানো পর্যন্ত তার ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম যেভাবে পড়ছে, তাতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তিনি।

পটুয়াখালী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলায় এ বছর গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৯৮ হাজার ৯৭৮টি। জেলার ৩ হাজার ৯৯টি খামারসহ স্থানীয়ভাবে গরু পালনকারীদের মিলে চাহিদার চেয়েও বেশি ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৮৯টি গবাদিপশু রয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলায় বড় আকারের গরুর সংখ্যা কম, তাই ব্যাপারীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় আকারের কিছু গরু নিয়ে আসছেন। বাজারে এখন পর্যাপ্ত গরু আসছে। গরুর দাম কিছুটা কম হলেও সামনে দাম বাড়বে এবং খামারি ও গরু পালনকারীদের লোকসান হবে না বলে বলে মনে করছেন তিনি।