পদ্মায় যেমন ঢেউ, তেমনি স্রোত, ফেরিঘাটে দুর্ভোগ কমছে না

স্রোতের বেগ সামলে ফেরিগুলো সচল রাখতে প্রতিটি ফেরিতে স্বল্প পরিসরে যানবাহন বহন করে পারাপার করা হয়। এতে ঘাটের উভয় পাড়ে আটকা পড়ছে যানবাহন। আজ সোমবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
স্রোতের বেগ সামলে ফেরিগুলো সচল রাখতে প্রতিটি ফেরিতে স্বল্প পরিসরে যানবাহন বহন করে পারাপার করা হয়। এতে ঘাটের উভয় পাড়ে আটকা পড়ছে যানবাহন। আজ সোমবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এই নৌপথে চলাচলরত ১৫টি ফেরি থাকলেও বর্তমানে থেমে থেমে চলছে ৬ থেকে ৭টি ফেরি। তা–ও আবার সন্ধ্যার পর থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়। ফলে এই নৌপথে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় ঘাটের উভয় পাড়ে আটকা পড়েছে অন্তত ৯০০ যানবাহন। আটকে পড়া যানবাহনের মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি কার্যালয় সূত্র জানায়, এক মাস ধরে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীর বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। নৌপথের সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে দুই সপ্তাহ ধরে সীমিত করা হয়েছে ফেরি চলাচল। স্রোতের বেগ সামলে ফেরিগুলো সচল রাখতে প্রতিটি ফেরিতে স্বল্প পরিসরে যানবাহন বহন করে পারাপার করা হয়। ফলে পদ্মা পারাপারে এক ঘণ্টার বিপরীতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে। এতে ঘাটের উভয় পাড়ে আটকা পড়ছে যানবাহন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটের উভয় পাড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি। টার্মিনালও ভরা পণ্যবাহী ট্রাকে। উভয় ঘাটের সংযোগ সড়কে ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের গাড়ির দীর্ঘ লাইন। ঘাটের পন্টুনগুলোর আশপাশ পদ্মার পানিতে এখনো তলিয়ে রয়েছে। পানির মধ্যে দিয়ে পন্টুন হয়ে ফেরিতে উঠছে যানবাহন। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের ফেরিতে উঠতে খুবই ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। প্রবল স্রোত আর বড় বড় ঢেউ সামলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে লঞ্চ ও স্পিডবোট।

সাত দিন ধরে টার্মিনালে আটকে পড়া পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যশোর থেকে চাল নিয়ে চট্টগ্রাম যাব। ফেরিঘাটে এসে আর সামনে এগোতে পারছি না।’

বরিশাল থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসের চালক আরিফ শিকদার বলেন, ‘ঘাটে যাত্রী পরিবহনের চাপ কম, তবু তিন ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকার পরে ফেরিতে উঠতে পেরেছি।’

সন্ধ্যা ছয়টায় বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, পদ্মার পানি এখনো বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাঝ পদ্মায় যেমন ঢেউ, তেমনি তীব্র স্রোত। অনেক কষ্টে ছয়–সাতটি ফেরি সচল রেখেছেন। রাতে স্রোতের বেগ বেশি থাকে, তখন ফেরি চললে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। তাই রাতে পুরোপুরি বন্ধ ফেরি–চলাচল। ফেরি–চলাচল স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঘাটে যানজট আর দুর্ভোগ থাকবেই।

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান বলেন, ঘাটের চারপাশে যানবাহনের অনেক চাপ। তাঁরা অ্যাম্বুলেন্স, গরুবোঝাই ট্রাক, কাঁচামালের ট্রাক, যাত্রীবাহী পরিবহনসহ জরুরি প্রয়োজনে আসা যানবাহনগুলো দ্রুত ফেরিতে ওঠার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। তবু ঘাটের যানবাহনের চাপ কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।