চা-বাগানে দিনভর কাজ, সন্ধ্যায় অনির্দিষ্টকাল বন্ধের নোটিশ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ধলই চা–বাগানে গতকাল সোমবার সকাল থেকে সারা দিন শ্রমিকেরা চা–পাতা উত্তোলনসহ সব কাজ করেন। সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে চা–বাগান কর্তৃপক্ষ কারখানার নোটিশ বোর্ডে একটি নোটিশ টাঙিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধ ঘোষণা করে। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা থেকে ধলই চা–বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালির (অঞ্চলের) কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাম পাইনকা গতকাল রাত ১০টায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই রহস্যজনকভাবে নোটিশের মাধ্যমে ধলই চা–বাগান কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য এ বাগান বন্ধ ঘোষণা করেছে। এটা শ্রম আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বিষয়টি জানার জন্য এ চা–বাগানের বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক জাকারিয়া হাবিবকে মুঠোফোনে ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, চা–বাগানের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীরা মিলে পরিকল্পিতভাবেই আকস্মিক সন্ধ্যায় নোটিশ ঝুলিয়ে ধলই চা–বাগান বন্ধ ঘোষণা করেছেন।

মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, গাছ কাটার অভিযোগ তুলে গত ২৩ জুন ধলই চা–বাগানের শ্রমিকসন্তান হীরা ভরকে (২২) ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন পাহারাদার মিলে বেধড়ক পিটিয়েছিলেন। একই সঙ্গে ঘটনার দিন বিকেলে ব্যবস্থাপক ইচ্ছেমাফিক নির্যাতনের শিকার হীরা ভরের বাবা চা–শ্রমিক রাধেশ্যামের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছিলেন ২৯ জুনের মধ্যে হীরাকে সপরিবারে চা–বাগান ত্যাগ করতে হবে। এ ঘটনায় শ্রমিক–অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

২৯ জুন চা–শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট শুরু করলে অভিযুক্ত ব্যবস্থাপক নিরাপত্তাহীনতায় বাগান ত্যাগ করেছিলেন। এ ঘটনায় ৫ জুলাই সন্ধ্যায় চা–বাগান ব্যবস্থাপনা, পঞ্চায়েত কমিটি, চা–শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ও ইউপির চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে চা–শ্রমিকদের প্রতিবাদের মুখে অবশেষে অভিযুক্ত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে আপাতত ধলই চা–বাগান কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে চা–বাগানে স্বাভাবিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য সহকারী ব্যবস্থাপক জাকারিয়া হাবিবকে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সুবিধাজনক সময়ে আবার ধলই চা–বাগান কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ধলই চা–বাগানে বসে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কথা ছিল। এখন হঠাৎ করে চা–বাগানের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীরা মিলে নোটিশ ঝুলিয়ে ধলই চা–বাগান বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন। ফলে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ধলই চা–বাগানে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। ইউপির চেয়ারম্যান আশঙ্কা প্রকাশ করে আরও বলেন, আজ মঙ্গলবার সকালে ধলই চা–বাগানে কী অবস্থার সৃষ্টি হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

ঘটনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে বর্তমানে ধলই চা–বাগানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক জাকারিয়া হাবিবকে মুঠোফোনে ফোন দিয়েও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় প্রথম আলোকে বলেন, ধলই চা–বাগানের একজন ব্যবস্থাপক চা–বাগান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ্য ঘোষণার অবহিতকরণ একটি চিঠি তাঁর দপ্তরে রেখে গেছেন। তিনি কর্মব্যস্ত থাকায় এ চিঠি পড়ে দেখার সুযোগ পাননি। তবে সন্ধ্যার পর খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, আকস্মিকভাবে চা–বাগান কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন।