চট্টগ্রামে আসামি যখন পুলিশের নাকের ডগায়

চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়ায় নগর পুলিশের সদর দপ্তরে সিটি করপোরেশন আয়োজিত এলইডি বাতির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাত মামলার আসামি মোহাম্মদ সোলায়মানকে (গোল চিহ্নিত) দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়ায় নগর পুলিশের সদর দপ্তরে সিটি করপোরেশন আয়োজিত এলইডি বাতির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাত মামলার আসামি মোহাম্মদ সোলায়মানকে (গোল চিহ্নিত) দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত

পুরো অনুষ্ঠানে তিনি কখনো পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলেন। কখনো–বা এ কাজ করছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের পাশে দাঁড়িয়ে। ফেসবুকে লাইভও দিচ্ছিলেন তিনি।

অথচ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সদর দপ্তরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন না।

তাঁর নাম মোহাম্মদ সোলায়মান। পুলিশের খাতায় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা ও অস্ত্র আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। তিনি বাকলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

রোববার বিকেলে নগরের দামপাড়ায় নগর পুলিশের সদর দপ্তরে সিটি করপোরেশন আয়োজিত এলইডি বাতির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সাত মামলার এই আসামি নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় ঘোরাঘুরি করলেও পুলিশ তাঁকে চিনতে পারেনি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বিব্রতবোধ করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, সোলায়মানের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা ও চারটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। ২০১১ সালে কোস্টগার্ডের হাতে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার হন তিনি। ছয়টি মামলা বিচারাধীন থাকলেও কক্সবাজারের মহেশখালীর মোহাম্মদ লোকমান হত্যা মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মো. শাহ আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত শেষের দিকে। আসামি রয়েছেন সোলায়মান।

নগরের বাকলিয়ার রাজাখালী এলাকায় ২০০৯ সালের ২৬ মে গুলি করে হত্যা করা হয় কাঠমিস্ত্রি মাহবুবর রহমানকে। এই মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ সোলায়মান। বাকলিয়া ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক ওরফে মানিককে হত্যাচেষ্টা মামলারও আসামি তিনি। এ ছাড়া শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর লেখালেখির অভিযোগে কিছুদিন আগে তাঁর ছোট ভাই এনামুল হককেও গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানা–পুলিশ।

সিএমপি সদর দপ্তরে সাত মামলার আসামি কীভাবে গেলেন, প্রশ্নের জবাবে নগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা খুবই বিব্রত। অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশন ও নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ আমন্ত্রিত ছিলেন না। কারও ঢোকার সুযোগও নেই। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর তাঁরা সোলায়মান সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়ায় নগর পুলিশের সদর দপ্তরে সিটি করপোরেশন আয়োজিত এলইডি বাতির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাত মামলার আসামি মোহাম্মদ সোলায়মানকে (গোল চিহ্নিত) দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়ায় নগর পুলিশের সদর দপ্তরে সিটি করপোরেশন আয়োজিত এলইডি বাতির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাত মামলার আসামি মোহাম্মদ সোলায়মানকে (গোল চিহ্নিত) দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সোলায়মান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন জানিয়েছেন, মেয়রের গাড়িবহরের সঙ্গে সিএমপি সদর দপ্তরে ঢোকেন সোলায়মান। এ বিষয়ে ফোন না ধরায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বিষয়টিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, খোদ পুলিশের অনুষ্ঠানে সাত মামলার আসামি কীভাবে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশে ঘোরাঘুরি করে। তাও আধ ঘণ্টা সময় ধরে? পুলিশ কেন তাকে চিনল না। নাকি আসামি আগে থেকে জানত তার ওপর কারও আশীর্বাদ রয়েছে, পুলিশ তাকে ধরবে না। এভাবে চলতে থাকলে আইনের শাসনের প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। অপরাধীদের সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দিতে মানুষ ভয় পাবে।

রাতে বাসা থেকে লাফ দেন সোলায়মান

সোলায়মানের বাসা নগরের বাকলিয়া কালামিয়া বাজার এলাকায়। রোববার রাতে বাকলিয়া থানা–পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে তাঁর বাসার পাশেও অভিযানে যায়। সেই খবর পেয়ে বাসা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান সোলায়মান। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের অভিযান চলাকালে সোলায়মান বাসা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। পরদিন সোমবার বিকেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর গ্রেপ্তারে বাকলিয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।