চিকিত্সক রাজীবের বাড়িতে মাতম

গত ২২ জুলাই নিজ বাসায় অগ্নিদগ্ধ হন রাজীব ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী অনুসূয়া ভট্টাচার্য । ছবি: সংগৃহীত
গত ২২ জুলাই নিজ বাসায় অগ্নিদগ্ধ হন রাজীব ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী অনুসূয়া ভট্টাচার্য । ছবি: সংগৃহীত

‘মা–বাবা আর রাজীবের পাঁচ বছরের মেয়ে রাজশ্রী ভট্টাচার্যকে সামলাতেই আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ছোট্ট কন্যাশিশুটি বাবাকে খুঁজছে। আর আমাদের মা–বাবা দুজনই একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে স্তব্ধ। তাঁরা কখনো বিলাপ করছেন। কখনো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।’

আজ মঙ্গলবার সকালে অগ্নিদগ্ধ চিকিৎসক রাজীব ভট্টাচার্যের মৃত্যুসংবাদ কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার বড়শালঘর ইউনিয়নের ইষ্টগ্রামে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছার পর সেখানকার পরিস্থিতি এভাবেই বর্ণনা করলেন তাঁর বড়বোন মণিদীপা ভট্টাচার্য। ইষ্টগ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারে এখন চলছে মাতম।

২১ জুলাই গভীর রাতে রাজধানী ঢাকার হাতিরপুলে ভাড়া বাসায় স্যানিটাইজার থেকে আগুন লেগে দগ্ধ হন চিকিত্সক রাজীব ভট্টাচার্য (৩৬) ও তাঁর স্ত্রী অনুসূয়া ভট্টাচার্য (৩২)। এরপর তাঁদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়। রাজীবের শরীরের ৮৭ শতাংশ এবং অনুসূয়ার ২০ শতাংশ পুড়ে যায়। এতে রাজীবকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রাজীব মারা যান। অনুসূয়া হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইষ্টগ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক লক্ষণ ভট্টাচার্য ও সরস্বতী ভট্টাচার্যের একমাত্র ছেলে রাজীব ভট্টাচার্য। তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলের মধ্যে রাজীব সবার ছোট।

রাজীব ২০০০ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারি মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের ঐতিহ্যবাহী অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পান। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যোগদান করেন। তিনি নিউরোসার্জারির ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছিলেন।

রাজীব ভট্টাচার্য সাত বছর আগে সিলেটের বাসিন্দা ও গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী অনুসূয়া ভট্টাচার্যকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। অনুসূয়া রাজধানীর শ্যামলীর একটি মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের রেজিস্ট্রার।

চিকিত্সক রাজীব ভট্টাচার্যের বড় বোন মণিদীপা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমার মা–বাবা ভেঙে পড়েছেন। ওর (রাজীব) বাচ্চা বাড়িতে খেলা করছে। ছোট্ট মানুষ জানে না কী হয়েছে। আমরা ওকে জানতেও দিইনি।’