বাঁধ চুইয়ে লোকালয়ে পানি, আতঙ্কে হাজারো পরিবার

পাবনার বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা গ্রামে জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চুইয়ে ভেতরে পানি ঢুকছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই স্থানে বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার তোলা ছবি। প্রথম আলো
পাবনার বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা গ্রামে জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চুইয়ে ভেতরে পানি ঢুকছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই স্থানে বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার তোলা ছবি। প্রথম আলো

পাবনার বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা গ্রামে জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চুইয়ে যমুনা নদীর পানি ভেতরে ঢুকছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বাঁধ এলাকার হাজার হাজার পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে ওই স্থানে বালুর বস্তা ফেলেছে। কিন্তু এতেও ভেতরে পানি ঢোকা বন্ধ হচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বেড়া কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনার পানির অত্যধিক চাপের কারণে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যমুনায় পানি বেড়ে চলায় বাঁধের বাইরে বেড়া উপজেলার শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে আছে।

পাউবো সূত্র জানায়, একসময় পাবনা জেলার বেশির ভাগ অংশ বন্যায় প্লাবিত হতো। সুজানগর ও বেড়া উপজেলায় পদ্মা ও যমুনা নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণের পর থেকে জেলার ৯০ ভাগ এলাকা বন্যামুক্ত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেড়া উপজেলার নগরবাড়ীতে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেছিলেন। বাঁধটির নির্মাণকাজ আশির দশকেই শেষ হয়। বাঁধের প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশের ঢালে ঘর নির্মাণ করে বাস করছে নদীভাঙনকবলিত কয়েক হাজার পরিবার। এর মধ্যে বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের পেঁচাকোলা এলাকায় বাঁধের ভেতরে ও বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করছে।

বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, পেঁচাকোলা গ্রামের কাছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি এমনিতেই দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ছয় থেকে সাত দিন ধরে ওই স্থানে বাঁধ চুইয়ে বন্যার পানি ভেতরে ঢুকছে। এ কারণে ভয় পেয়ে এলাকাবাসী ওই স্থানে বালুর বস্তা ফেলেছেন। কিন্তু এতে ভেতরে পানি ঢোকা বন্ধ না হওয়ায় পাউবো সোমবার থেকে সেখানে বালুর বস্তা ফেলা শুরু করেছে। এতে বাঁধের ভেতরে পানি ঢোকা পুরোপুরি বন্ধ না হলেও কিছুটা কমেছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের অংশের বাসিন্দা মনিরুল ইসলামের বাড়ির উঠান দিয়ে পানি ঢুকে বাঁধের ভেতরের অংশে বাঁধসংলগ্ন মিজানুর রহমানের মুরগির খামারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে পাউবোর পক্ষ থেকে বেশ কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। বালুর বস্তা ফেলার পরেও বাঁধ চুইয়ে অল্প অল্প করে ভেতরে পানি ঢুকছে।

পেঁচাকোলা গ্রামের বেগম খাতুন (৬০) বলেন, ‘পানি ঢোকা শুরু হওয়ার পরের থ্যা (পর থেকে) ভয়ে রাইতে ঘুমাইতে পারতেছি না। মনে হয় এই বুঝি বাঁধ ভাইঙ্গা গেল।’ একই গ্রামের মোতালেব আলী বলেন, ‘পানি ঢুকতে দেইখ্যা ভয়ে দুই-তিন রাত পরিবারের সবাই মিল্যা বাড়িতে থাকতেছি না। বাঁধ ভাঙলে আমারই ভয় বেশি। কারণ আমার বাড়ি বাঁধের নিচে।’

এ বিষয়ে স্থানীয় হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাঁধ দিয়ে পানি ঢোকায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। তবে পাউবো বালুর বস্তা ফেলায় এলাকাবাসীর আতঙ্ক এখন কমেছে। আমি এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছি।’

পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ বলেন, ‘জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পেঁচাকোলা গ্রাম এলাকায় যাতে কোনো বিপদ না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা সার্বক্ষণিক তৎপর আছি।’ তিনি দাবি করেন, ওই স্থানে বালুর বস্তা ফেলায় ইতিমধ্যে পানি ঢোকা প্রায় বন্ধ হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।’