সেতুটির চারপাশেই ধসে গেছে

রাজবাড়ী-মধুখালী সড়কের সদর উপজেলার মাটিপাড়া সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
রাজবাড়ী-মধুখালী সড়কের সদর উপজেলার মাটিপাড়া সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ী-মধুখালী সড়কের সদর উপজেলার মাটিপাড়া সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। দায়সারা গোছের কাজ করায় কিছুদিন যেতে না যেতেই সংযোগ সড়কের চারপাশ ধসে গেছে বলে স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ।

তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দাবি, অতিবৃষ্টির কারণে এই সমস্যা হয়েছে। কাজ চলাকালে কোনো গাফিলতি করা হয়নি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়কের নতুন বাজার থেকে সড়কটি শুরু হয়েছে। রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি নামের সড়কটি শেষ হয়েছে ফরিদপুরের মধুখালীতে। সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাটিপাড়া বাজারের উত্তর পাশের সেতুটি পুনরায় নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মীর হাবিবুল আলম নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায়। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে কাজ সম্পন্ন করেন এ বি সিদ্দিক ওরফে মিতুল নামের ফরিদপুরের এক ঠিকাদার। একই সড়কে এই সেতুসহ আরেকটি সেতুর চুক্তিমূল্য ধরা হয় ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ১৮ মিটার ও চওড়া ১০.৩ মিটার। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল কাজটি সম্পন্ন করার কথা ছিল। কাজ সম্পন্ন হয় চলতি বছরে। রাজবাড়ী-মধুখালী সরাসরি বাস চলাচলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে।

সেতুর চারপাশ ধসে গেছে। এতে এক পাশে রাস্তা ধসে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
সেতুর চারপাশ ধসে গেছে। এতে এক পাশে রাস্তা ধসে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে রয়েছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশা ও ভ্যান। প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে। সেতুর চারপাশেই ধসে গেছে। এতে এক পাশে রাস্তা ধসে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাকা রাস্তার তিন পাশে কোনো মাটি নেই। দুই-আড়াই মাস আগে কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা।

মাটিপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আল মামুন আরজু বলেন, সেতুটি রাস্তা থেকে কিছুটা ওপরে। কাজ চলাকালে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে সড়কের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি এসব বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। দায়সারা গোছের কাজ করেছেন। এতে যা হওয়ার তা–ই হয়েছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই সংযোগ সড়কের চারপাশ থেকে ধসে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

মোটরসাইকেল আরোহী অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, এই সেতুটি অনেক দিন ধরে নাজুক অবস্থায় ছিল। এরপর কাজ শুরু করা হলেও তা চলেছে ঢিমেতালে। কদিন মানুষ শান্তিতে যাতায়াত করতে পারল। কিন্তু এখনই পাকা রাস্তায় গর্ত হয়েছে। মাটি ধসে গেছে। এতে অন্য যানবাহন সাইড দিতে গিয়ে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় দুর্ঘটনা না ঘটলে হুঁশ হয় না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।’

পাকা রাস্তার তিন পাশে কোনো মাটি নেই। ছবি: প্রথম আলো
পাকা রাস্তার তিন পাশে কোনো মাটি নেই। ছবি: প্রথম আলো

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এ বি সিদ্দিক মিতুল দাবি করেন, মাস দুয়েক আগে সেতুর মূল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ার কথা শুনেছেন। অতিবৃষ্টির কারণে এই সমস্যা হয়েছে। কাজ চলাকালে কোনো গাফিলতি করা হয়নি। সেতুর নিচ থেকে পানি নেমে গেলে সংযোগ সড়কের জন্য আরও মাটি ফেলা হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের ভাষ্য, কাজের মান ভালো হয়েছে। সেতুর দুই পাশে জলাশয় রয়েছে। বৃষ্টির কারণে দুই পাশের সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হবে।