যত অনীহা মাস্ক ব্যবহারে

ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও অধিকাংশই তা মানছেন না। মাস্ক না পরলে জেল-জরিমানার ঘোষণা দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ে এর প্রয়োগ সীমিত। গতকাল দুপুরে সদরঘাট এলাকায়।  ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও অধিকাংশই তা মানছেন না। মাস্ক না পরলে জেল-জরিমানার ঘোষণা দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ে এর প্রয়োগ সীমিত। গতকাল দুপুরে সদরঘাট এলাকায়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বাসস্থানের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও অধিকাংশ মানুষই তা মানছেন না। দিন যত যাচ্ছে, লোকজন ততই মাস্ক ব্যবহারে উদাসীন হচ্ছেন। মাস্ক ছাড়া বাইরে না যেতে সরকারের পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়াসহ নানা মাধ্যমে প্রচার চালানো হলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। মাস্ক না পরলে জেল-জরিমানার ঘোষণা দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ে এর প্রয়োগ সীমিত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোষ্ঠীতে সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে হাট, বাজার, ব্যাংক, পরিবহনে লোকজনের উপস্থিতি বেড়েছে। ঈদের সময় অনেকে গ্রামেও যাবেন। এই সময়ে মাস্কের ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা না গেলে সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ৬৬ দিনের ছুটি শেষে ৩১ মে সীমিত আকারে অফিস, গণপরিবহন খোলা হয়। এরপর গত ৩০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে চলাচল নিয়ন্ত্রণের মেয়াদ ৩ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ায়। ওই প্রজ্ঞাপনে মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

২১ জুলাই ১১টি ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পুনরায় নির্দেশনা জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এতে কারা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন, সেটিও বলে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর, টোলারবাগ, মিরপুর ১ নম্বর ও পীরেরবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ লোকই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। গণপরিবহনের শ্রমিক ও যাত্রী, হাটবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় উপাসনালয়ে আগত ব্যক্তি, পথচারীদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা দেখা গেছে।

মিরপুর ১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী তুলছিল প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাস। বাসের চালকের সহকারী ইকবাল মিয়ার মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে ইকবাল পকেট থেকে মাস্ক বের করলেন। তিনি বলেন, ‘মাস্ক সঙ্গেই থাকে। ১২-১৩ ঘণ্টা ডিউটিতে সব সময় লাগায় রাখতে পারি না।’

কল্যাণপুর নতুনবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবজি, মাছ, মুদি, ফল বিক্রেতাসহ অধিকাংশ দোকানদারের মুখেই মাস্ক নেই। অনেক ক্রেতাও আসছেন মাস্ক ছাড়া। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, মাস্ক না পরে ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন না। বাজারে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাজার কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনকে।

কল্যাণপুর বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, দোকানমালিকদের বারবার মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। ক্রেতারা মাস্ক ছাড়া এলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ব্যবস্থা বাজার কমিটির নেই।

মাস্ক ব্যবহার না করায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ডিএনসিসির অঞ্চল-২ (মিরপুর) ১৯ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সংক্রামক রোগ আইনে ৪০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

মিরপুর বাঙলা কলেজের বিপরীত পাশে কয়েকটি চায়ের দোকান রয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যার পরে দেখা যায়, বেশ কিছু তরুণ চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। আর দুজনের মাস্ক থুতনিতে নামানো। কথা বলে জানা গেল, তাঁরা সবাই বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রায় সবার সঙ্গেই মাস্ক আছে, তবে সেটি সব সময় ব্যবহার করেন না।

হকার, শ্রমিক, রিকশা, ভ্যানচালকসহ সব পথচারী, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কর্মরত ব্যক্তিদের মাস্ক পরা বাধ্যতমূলক। শ্যামলী এলাকায়
দেখা যায়, একটি রিকশার যাত্রী ও চালক কারও মুখেই মাস্ক নেই। রিকশার হাতলে চালকের মাস্ক ঝুলছে। আরেক রিকশাচালক মো. ইয়াকুব বলেন, ‘রিকশা চালাতে বেশি বেশি শ্বাস টানতে হয়। মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। গরমও বেশি লাগে।’

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু
দায়সারা গোছের প্রজ্ঞাপন দিয়ে এসব কাজ বাস্তবায়ন করা যায় না। আটঘাট বেঁধে নামতে হয়। মানুষ যতটুকু মাস্ক ব্যবহার করছে, সেটি নিজেদের সচেতনতায়, আর যতটুকু নিয়ম মানছে না, তা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায়। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে পুলিশকে যুক্ত করে জনসম্পৃক্তভাবে এই কাজ করতে হবে।