পুলিশকে মারধর করে গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

পুলিশকে মারধর ও মাদক বহনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহ ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ তাঁদের অনুসারীদের। সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া মোড়ে। ছবি: প্রথম আলো
পুলিশকে মারধর ও মাদক বহনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহ ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ তাঁদের অনুসারীদের। সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া মোড়ে। ছবি: প্রথম আলো

পুলিশের ওপর হামলা ও মাদক বহনের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তাঁর স্বজন ও অনুসারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়কের কুট্টাপাড়া মোড়ে তাঁদের এ অবরোধে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়।

পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আলাউদ্দিনকে মারধর ও মাদক বহনের অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুট্টাপাড়া মোড় থেকে মাসুম বিল্লাহ (৩৪) ও তাঁর সহযোগী এনাম হককে (৩৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ সকাল আটটার দিকে তাঁদের সরাইল থেকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জেলা জজ আদালতে পাঠানো হয়।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাসুমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়কের সরাইল কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয় মোড়ে তাঁর স্বজন মুখলেছুর রহমান ও তাঁর ছেলে ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে বাপ্পির (৩০) নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক লোকজন টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর সরাইল থানা-পুলিশ সেখানে পৌঁছে তাঁদের ধাওয়া করলে তাঁরা পালিয়ে যান। মহাসড়কে বিক্ষোভের কারণে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কুমিল্লার পথে সদর উপজেলার নন্দনপুর পর্যন্ত, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঢাকার পথে বেড়তলা এবং সিলেটের দিকে বারিউড়া পর্যন্ত ও সরাইল-নাসিরনগর সড়কের উচালিয়াপাড়া পর্যন্ত বেলা একটা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। একটার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এই সময়ে যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, খাঁটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ ও সরাইল থানা-পুলিশ সেখানে মোতায়েন রয়েছে।

ঢাকা থেকে সিলেটগামী একাধিক পরিবহনের যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই পর্যন্ত একাধিক স্থানে যানজটের শিকার হয়েছেন। এখানে এসে সড়ক অবরোধের মুখে পড়লেন। মনে হচ্ছে সিলেট যেতে দিন পেরিয়ে যাবে।

সরাইল থানার ওসি এ এম এম নাজমুল আহমেদ বলেন, মাসুম বিল্লাহর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের শনাক্ত করতে পেরেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার এজাহার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সরাইল থানার এএসআই মো. আলাউদ্দিন ও দুজন কনস্টেবল মহাসড়কের কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে টহলে ছিলেন। পৌনে চারটার দিকে সীমান্তবর্তী বিজয়নগর উপজেলা থেকে মোটরসাইকেলে ফেরার পথে মাসুম বিল্লাহকে থামার সংকেত দেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় মোটরসাইকেল থামিয়ে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন মাসুম বিল্লাহ। পুলিশ মাসুম ও তাঁর সহযোগীর দেহ তল্লাশি করতে গেলে মাসুম তাতে বাধা দেন। পরে পুলিশ মাসুমের ট্রাউজারের পকেট থেকে ছয় বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে এএসআই আলাউদ্দিনকে মারধর শুরু করেন তিনি। চারটার দিকে সরাইল থানার ওসি এ এম এম নাজমুল আহমেদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাসুম ও তাঁর সহযোগীকে থানায় নিয়ে যান। মাসুম ও তাঁর সহযোগী জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা।

মাসুম বিল্লাহকে ছাড়িয়ে নিতে কিছুক্ষণের মধ্যে থানায় হাজির হন সরাইল উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ। কিছুক্ষণের মধ্যে চত্বরে ও থানার আশপাশে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে জড়ো হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। পরে থানা চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সরাইল থানা-পুলিশ এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। সাড়ে ছয়টার পর তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলে।

আওয়ামী লীগ নেত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ‘অনেকে মাসুম বিল্লাহকে আটকের বিষয়টি ফোন করে আমাকে জানায়। তাই তাকে দেখতে গেছিলাম। তবে আমি কোনো ব্যাপারে সুপারিশ করিনি।’

ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় ফোন দিয়ে ঝামেলার কথা বলে আমাকে থানায় নিয়ে যান। পরে মাদকের বিষয় জেনে আমি চলে এসেছি। আমি কোনো সুপারিশ করেনি।’

এএসআই আলাউদ্দিন বলেন, মোটরসাইকেল থামানোর সংকেত দেওয়ার পর মোটরসাইকেল থামিয়ে উত্তেজিত হয়ে তাঁকে মারধর করতে থাকেন মাসুম। তখন স্থানীয় লোকজন তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন।

থানায় মাসুম বিল্লাহ দাবি করেন, ‘আমি পরিচয় দেওয়ার পরও তিনি (আলাউদ্দিন) আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। এরপর তাঁর সঙ্গে আমার তর্ক ও একপর্যায়ে হালকা হাতাহাতি হয়।’

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এম এম নাজমুল আহমেদ জানান, মাসুম বিল্লাহ ও তাঁর সহযোগী এনাম হকের বিরুদ্ধে থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অপরটি পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে। দুটি মামলার বাদী হয়েছেন এএসআই আলাউদ্দিন। এ ছাড়া মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় একটি ও সদর মডেল থানায় দুটি মামলা রয়েছে।