শিবচরের আরেকটি বিদ্যালয় পদ্মার গর্ভে

মাদারীপুরের শিবচরে বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীর ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পদ্মার ভাঙনে চরাঞ্চল কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের একটি তিনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

এদিকে এখনো পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানিবন্দী রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। একই সঙ্গে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় শিবচরে পদ্মার পানি এক সেন্টিমিটার কমেছে। তবে এখনো বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে আড়িয়াল খাঁ নদের পানি গত এক দিনে দুই সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার ছোট-বড় নদ-নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে ৩৫টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা।

পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাতসহ সাতটি ইউনিয়ন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ৭৭ নম্বর কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার ভবনটির বেশির ভাগ অংশ বিলীন হয়। কয়েক দিন ধরে বিদ্যালয়টি ভাঙনঝুঁকিতে থাকায় ভাঙন প্রতিরোধে গত শুক্রবার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। তবে তীব্র স্রোতের কারণে বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এর কয়েক দিন আগে পদ্মা নদীর ভাঙনে বন্দরখোলা ইউনিয়নে একটি তিনতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়।

সদ্য বিলীন হওয়া কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জুলহাস ব্যাপারী বলেন, ‘ভাঙন শুরু হওয়ার পর কয়েক দিন আগে এমপি মহোদয়ের নির্দেশে বিদ্যালয় ফান্ড থেকে ৬০০ ব্যাগ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও আমরা বিদ্যালয়টি রক্ষা করতে পারিনি।’

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়টি বিলীন হওয়ার ফলে ২৭২ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া নিয়ে চিন্তায় আছি। খুবই কষ্টও লাগছে।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরেই আমরা আতঙ্কে ছিলাম। বিদ্যালয়টি রক্ষায় বালুর বস্তা ফেলা হয়েছিল। পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে আর রক্ষা করা গেল না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যেন ঘাটতি না হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা করব।’

মাদারীপুরের শিবচর ৭৭ নম্বর কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার ভবনটির বেশির ভাগ অংশই পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশটুকুও যেকোনো সময় ধসে পড়বে। কাঁঠালবাড়ি, ২৯ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
মাদারীপুরের শিবচর ৭৭ নম্বর কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার ভবনটির বেশির ভাগ অংশই পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশটুকুও যেকোনো সময় ধসে পড়বে। কাঁঠালবাড়ি, ২৯ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

উপজেলা প্রশাসনের সূত্রমতে, বর্তমানে পদ্মার ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, কাজীর সুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। আড়িয়াল খাঁর তীরবর্তী সন্ন্যাসীরচর, শিরুয়াইল, নিলখী ও বহেরাতলা দক্ষিণেও নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত নদীতে বিলীন হয়েছে সাড়ে চার শতাধিক ঘরবাড়ি। এসব এলাকায় খোলা ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

শিবচর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বি এম আতাউর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত আছে।

পাউবো মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মার পানি এক সেন্টিমিটার কমেছে। আরও দুই–এক দিন কমতেও পারে, আবার বাড়তেও পারে। তবে কমলেও বেশি কমবে না। আরও ৮  থেকে ১০ দিন পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকবে। তবে আড়িয়াল খাঁর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং ভাঙন দেখা দিয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’