শেরপুরে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী, ত্রাণ পায়নি এখনো

বগুড়ার শেরপুর পৌর এলাকায় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত বসতবাড়ি। বুধবার পূর্ব ঘোষপাড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
বগুড়ার শেরপুর পৌর এলাকায় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত বসতবাড়ি। বুধবার পূর্ব ঘোষপাড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শেরপুরে বন্যার কারণে কর্মহীন অন্তত তিন হাজার পরিবার। এসব পরিবার বুধবার পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণসামগ্রী পায়নি। শেরপুর পৌর শহরের ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডসহ উপজেলার খানপুর, খামারকান্দি, গাড়িদহ ও সুঘাট ইউনিয়নে পানিবন্দী এসব পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।

বুধবার সরেজমিনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে বাঙালী ও করতোয়া নদীতে পানি বাড়ছে। পানি ঢুকে পড়েছে পৌর শহরের পূর্ব ঘোষপাড়া ও উত্তর সাহাপাড়া পূর্ব মহল্লার মধ্যে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের আটটি গ্রামের ৫০০টি পরিবার, গাড়িদহ ইউনিয়নের ফুলবাড়ী ও ছোট ফুলবাড়ী গ্রামের ২০টি পরিবার ও খানপুর ইউনিয়নের সাতটি ওয়ার্ডে ২ হাজার পরিবার ও সুঘাট ইউনিয়নের সাহেববাড়ি, বিনোদপুর ও পূর্ব বিনোদপুর গ্রামের অন্তত ৩০০ পরিবার।

শহরের পূর্ব ঘোষপাড়া ও উত্তর সাহাপাড়ার অন্তত ১৮০টি পরিবারের ঘরের ভেতরে পানি ঢুকেছে। অনেকের শোবার ঘরে বুকসমান পানি। এসব পরিবারের অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন শহরের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে।

ওই দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা বলেন, বুধবার পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো ত্রাণসামগ্রী আসেনি। উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল ওহাব বলেন, মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। তাঁর ইউনিয়নের আটটি গ্রামের অন্তত ৫০০ দিনমজুর পরিবার কর্মহীন।

উপজেলার খানপুর ইউপির চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ১, ২ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডসহ ইউনিয়নের ৩, ৪, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের বেশির ভাগই দরিদ্র। দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী হয়ে থাকায় পরিবারগুলোতে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলার খামারকান্দির মাগুড়াতাইর গ্রামের এক নারী বলেন, তাঁর স্বামী ইটভাটায় দিনমজুরির কাজ করেন। এই কাজও এখন নেই। পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে রয়েছেন। ইউনিয়নের ভাতারিয়া গ্রামের শুকুর আলী বলেন, বাড়ির আঙিনায় বন্যার পানি উঠেছে। পানি প্রতিদিনই বাড়ছে।

বন্যার পানি ঘরে ঢুকে পড়ায় শহরের সরকারি ডি জে হাইস্কুলে আশ্রয় নেওয়া আলেয়া খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী বন্যার কারণে দিনমজুরিও করতে পারছেন না। সরকারিভাবে তাঁরা এখনো কোনো সাহায্য পাননি। একই প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া বুদা শেখ বলেন, তিনি গ্রামে গ্রামে সাপের খেলা দেখিয়ে যে আয় করেন, তা দিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চালান। বন্যার কারণে এই আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সংসার চলে না।

বুধবার বিকেলে ইউএনও লিয়াকত আলী সেখ বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে থেকে লিখিতভাবে তালিকা পাওয়ার পর পানিবন্দী পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।