লকডাউন শেষ, কড়াকড়িও নেই, কোভিড রোগী বাড়ছেই লক্ষ্মীপুরে

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় কোভিড-১৯–এর সংক্রমণ বেড়েই চলছে। শুধু সদর উপজেলায়ই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০৪। জেলার অন্য চারটি উপজেলার তুলনায় সদর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা চার-পাঁচ গুণ বেশি।

গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৬ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদরেই ১১ জন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যাও এ উপজেলায় অনেক বেশি, ১৬ জন।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, তাঁর বাবা লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরীসহ সদর উপজেলার অর্ধশতাধিক জনপ্রতিনিধিও কোভিডে আক্রান্ত হন।

জেলার পাঁচটি উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৪। আর এ পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের দুজন শিক্ষক জানান, রেড জোন (লালা এলাকা) হিসেবে চিহ্নিত করে ১৫ দিনের লকডাউন (অবরুদ্ধ) গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। ওই পর্যন্ত সংক্রমণ ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা অনেক তৎপর ছিলেন। ১ জুলাই থেকে তাঁদের ওই তৎপরতায় কিছুটা ভাটা পড়ে। লকডাউন ও বাড়িতে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) নিশ্চিত করতে সদর উপজেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বাজার ও লোকালয়ে দিন–রাত লোকজন গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ঘোরাফেরা করছেন। শারীরিক দূরত্ব মানার বিষয়টি তোয়াক্কা করছেন না অনেকেই। মাস্ক ছাড়া রাস্তাঘাটে বের হচ্ছেন লোকজন। এ কারণে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৪। আক্রান্তদের মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদরে ৮০৪ জন, কমলনগরে ১৬৩, রায়পুরে ১২৬ জন, রামগঞ্জে ১৯৬ জন ও রামগতিতে ৭৫ জন।

এদিকে এ পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত হয়ে জেলায় মোট ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত চার মাসে উপসর্গ নিয়ে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২৬ জন ব্যক্তির কোভিড শনাক্ত হয়। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ৫ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদরে ১৬ জন, রামগঞ্জে ১১, রায়পুরে ২ জন এবং রামগতি ও কমলনগরে ১ জন করে রয়েছেন। এ পর্যন্ত কোভিড লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন ১ হাজার ১১৪ জন। তাঁদের অধিকাংশই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

সদর উপজেলার তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, উপসর্গে থাকা লোকজনের অনেকেই নমুনা দিয়ে ও না দিয়েও যখন-তখন যেখানে-সেখানে আড্ডা মারছেন। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কার্যকর তৎপরতা নেই। এতে সদরে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। এসব বন্ধে তদারকি ও নজরদারি না বাড়ালে এখানকার কোভিড পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা কোভিড প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ও সিভিল সার্জন মো. আবদুল গাফ্ফার বলেন, ‘জেলার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। জনবলের সংকটসহ নানা কারণে আমরা এখনো এখানে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। দিন যত যাচ্ছে মৃত্যু ও আক্রান্ত দুটিই সদরে বাড়ছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সম্ভাব্য সবকিছুই করা হচ্ছে। মূলত লোকজনের স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবেই সংক্রমণের হার বাড়ছে।’