কোনো চিহ্নই রইল না স্কুলটির

শরীয়তপুরের নড়িয়ার ৮১ নম্বর বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেষ চিহ্ন এই দ্বিতল ভবনটি আজ বৃহস্পতিবার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর স্কুলের কোনো চিহ্ন নেই। ছবিটি গতকাল বুধবারের। প্রথম আলো
শরীয়তপুরের নড়িয়ার ৮১ নম্বর বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেষ চিহ্ন এই দ্বিতল ভবনটি আজ বৃহস্পতিবার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর স্কুলের কোনো চিহ্ন নেই। ছবিটি গতকাল বুধবারের। প্রথম আলো

শরীয়তপুরের ৮১ নম্বর বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেষ পাকা ভবনটিও আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল বুধবার ৪০ শতাংশ জায়গাসহ একটি ভবন বিলীন হয়েছিল। ওই স্থানে এখন আর স্কুলটির কোনো চিহ্ন নেই।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের একটি মৌজা বসাকের চর। দুর্গম ওই চরের চারদিকে পদ্মা নদী। এমন একটি চরেই গৌরবের সঙ্গে ৭৮ বছর ধরে শিশুদের পাঠদান করানো হতো বিদ্যালয়টিতে। গত বছর বিদ্যালয় থেকে নদীর দূরত্ব ছিল ৫০০ মিটার। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় গত বছর থেকেই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি।

পদ্মার তীব্র ভাঙনে বসাকের চর গ্রামের আরও ৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ নিয়ে ২ দিনে ১৬০টি পরিবার মাথাগোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৪২ সালে বসাকেরচর গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের পাঠদানের জন্য চারজন শিক্ষক আছেন। এর আগে বিদ্যালয়টি আরও কয়েক দফা ভাঙনের শিকার হয়। সর্বশেষ ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মায় বিলীন হয়। এরপর বসাকের চরের নতুন স্থানে ৪০ শতাংশ জমির ওপর ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি নতুন ঠিকানা পায়। ঘূর্ণিঝড়ে আধা পাকা ভবন বিধ্বস্ত হলে ২০১২ সালে একটি দ্বিতল ভবন ও ২০১৭ সালে একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, স্কুলটির আর কোনো চিহ্নই রইল না। আগ্রাসী পদ্মায় হাজারো শিশুর ভালোবাসার বিদ্যাপীঠের ধসে যাওয়া দেখেছি আর দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলেছি।

এক সপ্তাহ ধরে এ এলাকায় তীব্র ভাঙন চলছে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ দেখে গত মঙ্গলবার স্কুলের ফার্নিচার পাশের সরকারকান্দি গ্রামের একটি উঁচু স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়ন্তী রুপা রায় বলেন, বিদ্যালয়টির আসবাব যাতে নষ্ট না হয়, এখন সে চেষ্টা করা হবে। আর ভাঙনের ঝুঁকি নেই এমন কোথায় বিদ্যালয়টি স্থাপন করা যায় তা দেখতে হবে।

পাউবোর শরীয়তপুর কার্যালয় জানায়, নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট, ওকিলউদ্দিন মুন্সিকান্দি, বড়কান্দি ইউনিয়নের দুর্গাহাট, নাজিম উদ্দিন ব্যাপারীকান্দি, নড়িয়ার ঘরিসার ইউনিয়নের চরমোহন, বাংলাবাজার, চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকেরচর, কীর্তিনাশা নদীর নড়িয়ার মোক্তারের ইউনিয়নের ঢালীপারা, সদরের পালং ইউনিয়নে কোটাপারা, ডোমসার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের নির্দেশে ওই স্থানগুলোতে ভাঙন রোধের জন্য বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়ার চরআত্রা ও নওপারা ইউনিয়নের ভাঙন রোধ করার জন্য সাড়ে পাঁচ শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ দুই মাস আগে শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছিল। এর মধ্যেই সেটি ভাঙনে বিলীন হয়ে গেল।

স্থানীয় সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন ওই এলাকার মানুষের প্রতি আমার প্রতিশ্রুতি হচ্ছে দ্রুততম সময়ে নতুন স্থানে বিদ্যালয়টি গড়ে দেওয়া হবে। আর গৃহহীন পরিবার গুলোকে পুনর্বাসন করা হবে।’