স্মৃতির পাতায় ২০২০

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

মহামারিকালীন এইচএসসি পরীক্ষা

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রকোপের কারণে আমার মতো যারা বাড়িতে আটকে আছে, বিশেষ করে আমার ব্যাচমেট সব এইচএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুদের প্রতি আমার সমবেদনা। ছোটবেলায় যত স্কুল ছুটির জন্য দোয়া করে ছিলাম, সেসব দোয়া এই সময়ে এসে কাজে লেগে গেছে। সত্যি, যে পড়াশোনা থেকে বারবার পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছি, করোনা এসে বুঝিয়ে দিল যে এই পড়াশোনাই আমাদের সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে কাছের বন্ধু।

করোনার এই সময়ে শিক্ষার্থী সমাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে আছে আমার মতো এইচএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা। আমরা জানি না আমরা এখন কোনটার জন্য পড়ব, এইচএসসির জন্য নাকি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য। এত দীর্ঘ সময়ের বন্ধের ফলে আমাদের সব পরীক্ষার প্রস্তুতিতেই ভাটা পড়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী তাদের নিয়মিত পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। ফলে পরীক্ষা প্রস্তুতিতে একটা লম্বা গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও এইচএসসি পরীক্ষার ও পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে তাদের উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো।

একটানা দীর্ঘদিন ঘরবন্দী অবস্থা ও চলমান অনিয়ন্ত্রিত বন্যা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের মনে একধরনের বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও মননশীলতা হারাচ্ছে, অনেকেই বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। এমনকি বেশ কিছু আত্মহত্যার খবরও পাওয়া গেছে। জানি না এসব কিছু থেকে আমাদের মুক্তি কবে।

‘আমার ধুলাবালু জমা বই, আমার বন্ধুরা সব কই, আমার ভাল্লাগে না এই মিথ্যে শহর রাতের আড়ালে রই।’

আমার মতো যারা ক্যাম্পাস আর বন্ধুদের সঙ্গে সারা দিন আড্ডায় মেতে থাকত, তাদের জন্য উৎকৃষ্ট লাইন এটি। জানি না আবার কবে ফিরব আমার সেই প্রাণের ক্যাম্পাসে, কবে আবার বসবে আমাদের সেই আড্ডা, হাসি-আনন্দে আবার মাতব একসঙ্গে। পৃথিবী তুমি দ্রুত সুস্থ হও, আমি আবার আমার ক্যম্পাসে খালি পায়ে হাঁটতে চাই, আবার বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠতে চাই প্রাণের স্পন্দনে। হেসে লুটোপুটি খেতে চাই মখমলের মতো সবুজ ঘাসে। সেই সময় পর্যন্ত আমাকে বাঁচিয়ে রেখো হে মহামহিম পরওয়ারদিগার।

*লেখক: শিক্ষার্থী, এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ইসলামিয়া সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ