লাভ-ক্ষতি ভুলে বাপ-দাদার ঐতিহ্য আঁকড়ে আছেন তাঁরা

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে কামারপল্লিতে দম ফেলার ফুরসত নেই কর্মকারদের। ছবি: প্রথম আলো
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে কামারপল্লিতে দম ফেলার ফুরসত নেই কর্মকারদের। ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর পৌর এলাকার আড়াইবাড়িয়া। এখানকার কামারপল্লির স্থানীয় নাম কাস্তে গ্রাম। বছরের অন্য সময়ে ধান কাটার কাস্তে তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন কর্মকারেরা। তবে ঈদুল আজহার সময় এলেই চিত্রটা পাল্টে যায়। পশু কোরবানির কাজে ব্যবহৃত দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল, খুন্তি তৈরিতে চরম ব্যস্ত সময় কাটান তাঁরা। আড়াইবাড়িয়া কামারপল্লিতে বাপ-দাদার আমল থেকে তিন শতাধিক পরিবার এ পেশায় নিয়োজিত। এখানকার তৈরি দা–বঁটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সুখ্যাতিও লাভ করেছে। বর্তমানে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি বের হলেও টিকে রয়েছে কামার পরিবারগুলো। কিশোরগঞ্জ জেলা ছাড়াও পাশের নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় এখানকার তৈরি জিনিস বিক্রি হয়।

আড়াইবাড়িয়া গ্রামে ঢুকলেই দূর থেকে হাতুড়ি পেটানোর টুংটাং শব্দ কানে ভেসে আসে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কেউ হাঁপর টানছেন, কেউ তৈরি জিনিসে ঘষামাজা করছেন, কেউ আবার চুলায় ছুরি, চাপাতি দিয়ে আগুনে গরম করছেন। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই কর্মকারদের।

আড়াইবাড়িয়া গ্রামের মো. সোহরাব উদ্দিন (৬১) বলেন, তাঁর বাবা ইমাম উদ্দিনের এ পেশা ছিল। বাবার কাছ থেকে শিখে তিনি নিজে এ পেশায় নিয়োজিত হন। এখন তাঁর ছেলে রাজন মিয়াও (৩০) এ পেশা ধরেছেন। গ্রামের আসাদ মিয়া, জিল্লুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, সবুজ মিয়া, বোরহান উদ্দিন ও শরীফ মিয়া বলেন, লাভ কমবেশি যা–ই হোক না কেন, তাঁরাও বাপ-দাদার এ পেশার ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে আছেন এখনো।

পল্লির কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, লোহা-লাকড়িসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো আর এখন তেমন একটা লাভ হয় না। এবার করোনা মহামারির কারণে আরও বেহাল। সরকার যদি সহজ কিস্তিতে তাঁদের ঋণ বা আর্থিক সহায়তা করত, তাহলে তাঁরা উপকৃত হতেন। তাঁরা জানান, প্রতিটি ছোট ছুরি ৫০-৮০ টাকা, বড় দা ও ছুরি ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তৈরিসহ অন্যান্য খরচা বাদে জনপ্রতি রোজ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা তাঁদের আয় হয়, যা দিয়ে বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে তাঁদের জন্য।

হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল মিয়া বলেন, উপজেলার আড়াইবাড়িয়া কামারপল্লির তিন শ পরিবারের বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের জন্য সহজে ঋণের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।