মহামারির কালে অন্য রকম ঈদ

প্রিয়জনের কাছে কমই যাচ্ছে মানুষ। বাস, রেল, লঞ্চে ঘরমুখী মানুষের চেনা সেই জনস্রোত নেই। ঈদগাহে জামাত হচ্ছে না। কোরবানির হাটেও ভিড়ভাট্টা কম। মহামারির এই কালে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। এমনি ভিন্ন আবহে কাল শনিবার ১০ জিলহজ উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে ঈদুল আজহা। আমাদের দেশে এই ঈদ কোরবানির ঈদ নামেই পরিচিত।

ঈদুল আজহা আসে আত্মত্যাগের মহিমা নিয়ে। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক নর-নারীর জন্য এই ঈদে পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আমাদের দেশে গরু ও ছাগলই কোরবানি করা হয় বেশি। অল্প কিছু মহিষ, ভেড়া, উট-দুম্বাও কোরবানি করা হয়। ধর্মীয় বিধান অনুসারে ঈদের দুই দিন পর অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজ তারিখেও কোরবানি করা যায়।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাঁর উদ্দেশে পশু কোরবানির ভেতর দিয়ে নিজেদের ভেতরের পশুত্ব ও লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষকে কোরবানি করাই এই ঈদের মূল তাৎপর্য। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তবে আল্লাহপাকের কুদরতে ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। ঈদের দিন সকালে ঈদগাহে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজের খুতবায় খতিবরা এই ঘটনার বয়ান দেন এবং কোরবানির তাৎপর্য তুলে ধরেন। তবে এবার আগেই সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। মসজিদগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। গত ঈদুল ফিতরেও ঈদগাহে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়নি।

কোরবানির ঈদের আগে আগে পশু কেনা, তার পরিচর্যা করার মধ্য দিয়ে যে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়, শহরের দৃশ্যপটে এবার তা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। ক্রেতারা হাট থেকে গরু কিনে গলায় জরির মালা, শিংয়ে রাংতা জড়িয়ে দড়ি ধরে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে যাওয়ার সেই দৃশ্য এবার তেমন চোখে পড়েনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকেই এবার কোরবানি দিচ্ছেন না। আবার যাঁরা কোরবানি দিচ্ছেন, তাঁরাও হাটে হাটে বেশি ঘোরাফেরা না করে চটজলদি পশু কিনে বাসায় ফিরছেন। বরাবর যেমন অনেকে কোরবানির কয়েক দিন আগে পশু কিনে তাদের একটু পরিচর্যা করার চেষ্টা করেন, এবার তা থেকে বিরত থাকছেন।

এ ছাড়া গত ঈদুল ফিতরের মতো এবার ঈদুল আজহাতেও লোকেদের ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার অত তাড়া দেখা যায়নি। গত ৩১ মে থেকে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ সব যানবাহন চালু হয়েছে। তবে নিরাপদ থাকতে অনেকে ঈদে বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। ফলে বরাবর বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও সদরঘাটে ঈদের সপ্তাহখানেক আগে থেকে ব্যাগ-বোঁচকা নিয়ে যে বিপুল জনস্রোত দেখা যায়, সেই দৃশ্য এবার ছিল না। এসব মিলিয়েই এক অন্য রকম কোরবানির ঈদ এসেছে এবার।

ঈদের জামাত
রাজধানীতে এবার জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের ছয়টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। এর ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদের জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মওলানা মো. মিজানুর রহমান। দ্বিতীয় জামাত ৭টা ৫০ মিনিটে, তৃতীয় জামাত ৮টা ৪৫ মিনিটে, চতুর্থ জামাত ৯টা ৩৫ মিনিটে, পঞ্চম জামাত সাড়ে ১০টা এবং শেষ জামাত বেলা ১১টা ১০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।