গাছ ঢেকে যাচ্ছে পেরেক ঠুকে টাঙানো বিজ্ঞাপনে

মেহেরপুরে গাছে গাছে পেরেক ঠুকে লাগানো হচ্ছে বিজ্ঞাপনের ব্যানার–ফেস্টুন। সম্প্রতি ছবিটি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধলা বাজার থেকে তোলা। ছবি: আবু সাঈদ
মেহেরপুরে গাছে গাছে পেরেক ঠুকে লাগানো হচ্ছে বিজ্ঞাপনের ব্যানার–ফেস্টুন। সম্প্রতি ছবিটি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধলা বাজার থেকে তোলা। ছবি: আবু সাঈদ

মেহেরপুরে গাছে গাছে পেরেক ঠুকে টাঙানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারসহ নানা ধরনের বিজ্ঞাপন। সড়কের পাশে বেড়ে উঠা গাছগুলো মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু হলেও অসচেতনতায় চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। এভাবে গাছে গাছে পেরেক ঠুকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন লাগানোর ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা গেল, জেলার গাংনী পৌরশহরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অর্ধশত বছর বয়সী পাকুড় গাছটি বিজ্ঞাপনের ব্যানার, ফেস্টুনে প্রায় ঢেকে ফেলা হয়েছে। শুধুমাত্র গাংনী পৌর এলাকা নয়, বিভিন্ন এলাকায় একই চিত্র।

গাংনী পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুনে অননুমোদিত আট শতাধিক ব্যানার, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ডসহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের একটি তালিকা করেছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মেহেরপুর সদর পৌরসভা, গাংনী পৌরসভা ও মুজিবনগরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নামধামসহ অননুমোদিত শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপনের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এসবের বিরুদ্ধে প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নিলেও পরবর্তীতে আবার আগের পরিস্থিতি হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কাছে একটি নিম গাছে পেরেক ঠুকে টাঙানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার–ফেস্টুন। পৌর শহরের মূল সড়কগুলোর পাশে বেড়ে ওঠা গাছগুলো ছেয়ে আছে রাজনৈতিক ব্যানার আর ফ্রিজ–টিভির বিজ্ঞাপনে। সদরের আমঝুপি বাজার, বাড়াদি বাজার, গাংনী উপজেলার বামুন্দি বাজার, মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জবাজার—সব এলাকাতেই এই অবস্থা।

মেহেরপুরের ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভূগোলের শিক্ষক ও পরিবেশবিদ মাসুদ রেজা বলেন, ‘যথাসময়ে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নেওয়ায় গাছের ওপর মানুষের এই অত্যাচার থামছে না। শহরের অধিকাংশ গাছে পেরেক বা তারকাঁটা ঠুকে বিজ্ঞাপন লাগানোয় শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার। গাছপালায় পেরেক লাগিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ করা উচিত।’

মেহেরপুরের অধিকারকর্মী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৃক্ষের কষ্টটা আমরা কেউ উপলব্ধি করি না। প্রতিনিয়ত বৃক্ষ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে আমরা বাধাগ্রস্ত করছি। বৃক্ষ যে অক্সিজেন দিয়ে মানবজাতিকে বাঁচিয়ে রাখে এবং বৃক্ষেরও যে প্রাণ আছে, তা মানুষ ভুলেই গেছে।’

পরিবেশবিদদের মতে, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া–অণুজীব ঢোকে। এতে গাছের ওই জায়গায় দ্রুত পচন ধরে। গাছের খাদ্য ও পানি শোষণপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে গাছ মারাও যেতে পারে।

মেহেরপুর বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জাফরুল্লাহ বলেন, ‘গাছে গাছে পোস্টার লাগানোর বিরুদ্ধে আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটা নিয়ে সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। ২০১৯ সালেও একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম গাছে গাছে পোস্টার লাগানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তবে শেষমেশ কার্যকর হয়নি। মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের সবারই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। শুধু প্রশাসনিক তৎপরতায় এই কাজে সাফল্য আসবে না, নাগরিক সচেতনতাও দরকার।’

মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘যেকোনো গাছের সঙ্গে পেরেক বা তারকাঁটা ঠুকে বিজ্ঞাপন প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অনুমতি ছাড়া এসব সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে গাছের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া বিজ্ঞাপনগুলোর বিষয়ে আইনে পদক্ষেপ নিতে পৌরসভা একটি তালিকা করেছে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, অবৈধ সব বিজ্ঞাপন অপসারণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে তা দেওয়া হবে।