এক মাস পরে সুস্থ জীবনে ফিরলাম

>

করোনাভাইরাসে পাল্টে গেছে জীবনের বাস্তবতা। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। করোনায় জীবন নিয়ে লিখছেন অনেকেই। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর সিরিজ লিখছেন এই লেখক, কবি। আজ পড়ুন পঞ্চম পর্ব

আল্লাহর রহমতে সবার দোয়া এবং ইতিবাচক মনোবলের কারণে আজ আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আলহামদুলিল্লাহ। আজ ২০ জুলাই। এক মাসের করোনাযুদ্ধের ভয়াবহতম অবস্থা থেকে সুস্থ জীবনে ফিরে এলাম। আমার ও বাসার সবার করোনা টেস্ট নেগেটিভ এল। ফুসফুসের ইনফেকশন সম্পূর্ণ ভালো।

এখনো সেসব সময়ের কথা মনে পড়লে হিম হিম লাগে। কোনো খাবারের স্বাদ, গন্ধ বুঝতে পারতাম না। তবুও জোর করে খাবার খেতাম শক্তির জন্য। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকার জন্য।

আমি একা একা রাতে মাঝেমধ্যে খুব ভয় পেতাম। মনে হতো, হয়তো আজ রাতই শেষ রাত আমার জন্য। কত কত কষ্ট হতো শরীরে। কখনো কখনো প্রেশার কম। শেষের দিকে তো প্রেশার বেড়ে ওপরে ১৬০, নিচে ১১০। কখনো অক্সিজেন লেভেল ৯০–এর নিচে। কিন্তু সাহস রেখেছি। আল্লাহকে বলতাম, আল্লাহ, আমি তো তোমার কাছে সমর্পিত। আমার হায়াত থাকলে রেখে যাও আমার প্রিয়জনদের জন্য। আসলে ভয়াবহ অন্ধকার ছিল সেই সময়গুলো।

আমি এর মধ্য নিয়মিত নামাজ পড়েছি। দাঁড়িয়ে পড়তে না পারলে বসে পড়তাম। নফল নামাজ নিয়মিত পড়েছি সাধ্যমতো। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেছি। সুরা ইয়াসিন, সুরা আর রহমান নিয়মিত পড়েছি। দোয়া ইউনুস পড়েছি। ওষুধ ও খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে এভাবেই দোয়াকালামের মাধ্যমে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে শক্তি একাত্ম করেছি আর ভালো থাকার চেষ্টা করেছি, বাড়িয়েছি মনোবল।

ভাই, বোন, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাদের উদ্বিগ্নতা কমানোর জন্য আমি তাদের ফোন ধরে নিজেকে যতটা সম্ভব সতেজ রাখতাম। প্রিয়জনদের বেশি দুশ্চিন্তায় দেখতে ভালো লাগত না। এ অবস্থার মধ্যেও আমার চার–চারটা বইয়ের কাজ এগিয়ে নিয়েছি। প্রুফরিডিং থেকে শুরু করে প্রচ্ছদ ও প্রকাশনার কাজ যতটা সম্ভব করেছি। বারবার মনে হচ্ছিল যদি চলেই যাই এবারের মতো। আমার আরও কিছু কাজ থেকে যাক পৃথিবীতে। থেকে যাক আমার প্রিয় পাঠকদের কাছে।

আমি নিজেকে কাজের মধ্যে আচ্ছন্ন রেখেছিলাম। ইতিবাচক চিন্তা, কাজ, স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আমাদেরকে যেকোনো ভয়ংকর অবস্থা মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। আমার ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে।

আমার মনে হয়েছে যতটুকু পারি কাজগুলো রেখে যাই। যদি চলেই যেতে হয় গেলাম। কিন্তু আমার মৃত্যুর পরেও আমার কাজ জীবনে চলবে।

মাঝেমধ্যেই স্বামী বলত, তুমি কিন্তু কিছু গোপন কোরো না তোমার কষ্টগুলো। তোমার খারাপ লাগার কথাগুলো।

এটাও সত্যি যে আমার সব কষ্ট ওকে জানাইনি। খুব কষ্ট হলেও নড়াচড়া কম করতাম রাতে। পাশে ওর ঘুম ভেঙে যাবে! ও অস্থির হবে। মাঝেমধ্যে এও মনে হতো। আমি হয়তো ওকেও বলে যেতে পারলাম না চলে যাওয়ার সময়। এভাবেই এক ভয়ানক পীড়া ও অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে পার করলাম আমরা এক মাসের করোনা জার্নি। আর জয় করলাম করোনাযুদ্ধ।

বর্তমানে আমি ও আমরা ভালো আছি। তবে আমার চোখে, মুখে, গলায় আজ (২০ জুলাই) তিন দিন ধরে খুব র‍্যাশ উঠেছে। খুব চুলকানো আর ফুলে গেছে। হয়তো অ্যালার্জি বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। গত রাতে আমার মুখের স্কিনের বয়স মনে হলো ১০০ বছরেরও ওপরে। সবাই আবারও ভয় পেল। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললাম, ওষুধ দিলেন। আর বললেন, এটা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আমি যে অনেক অনেক মেডিসিন খেয়েছি এই এক মাসে।

দোয়া করি, পৃথিবী করোনামুক্ত হোক। পৃথিবীর সব মানুষ সুস্থ, সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবীতে বাঁচুক। আমিন। শেষ।