করোনাকালের ছুটি না অস্বস্তি

>

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

২০০৯ সালে চাকরি ছাড়ার পর খুবই কষ্ট হচ্ছিল। কারণ কর্মচাঞ্চল্য জীবনে ছন্দপতন। তেমনি করোনাকালে অবিরাম ছুটি আমাকে সেই আগের কষ্টের মধ্যে ফেলেছে। স্বাভাবিক সময়ে সারা দিন ব্যস্ততা আমার স্কু্লপড়ুয়া দুই মেয়েকে ঘিরে। স্কুলে আনা-নেওয়া, সংসারে কর্মযজ্ঞ এবং সন্ধ্যার পর তাদের পড়াশোনার দেখাশোনা করা।

করোনাকালে নিয়মিত ছকবাঁধা রুটিনে আবারও ছন্দপতন। কেননা মেয়েদের স্কুল বন্ধ। নেই সময়মতো ঘর থেকে বের হওয়ার তাড়া এবং সংসারের কাজকর্ম দ্রুত শেষ করার ব্যস্ততা। এক ধরনের বিশ্রাম দিচ্ছে করোনাকাল। কিন্তু সত্যিই কি বিশ্রাম পাচ্ছি। না, সারাক্ষণ করোনাভীতি আর দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করছে, এই বুঝি করোনা আক্রমণ করল আমার পরিবারকে। এই দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিচ্ছি। ফিনাইল বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঘর, আসবাব, জানালার গ্রিল পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে সন্তানদের ও তাদের বাবাকে বারবার তাগাদা দিচ্ছি সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়ার জন্য। বিশেষত মেয়েদের মসলাযুক্ত চা খাওয়ার জন্য নানা রকম গল্পের অবতারণা করতে হয়।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আব্বা-আম্মার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তাদের ও নিজেদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তার কথা ভেবে যেতে পারছি না। এ কেমন ছুটি, যে ছুটির সদ্‌ব্যবহার করতে পারছি না। প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি এই মহামারি থেকে মুক্তির।

আমি এ ধরনের ছুটি বা বিশ্রাম চাই না, যেখানে শুধু মানসিক অবসাদ ও অস্বস্তি। আমি মেয়েকে নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যেতে চাই স্কুলের বাচ্চাদের কলকাকলি শুনতে। দেখতে চাই সিদ্ধেশ্বরীর রাস্তায় ভিড় ঠেলে সকাল-বিকেলে স্কুলগামী ছাত্রীদের কোলাহল আর অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার নিত্যকার দৃশ্য। স্কুলের সামনে ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসা নারী বিক্রেতার কাছ থেকে কাপড় কিংবা ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় সওদাপাতি কিনতে না পারার কষ্ট আমাকে পীড়া দেয়। আমি চাই আত্মীয়স্বজনদের নৈকট্য, চাই মা-বাবার সান্নিধ্য। ফিরে যেতে চাই করোনার আগের স্বাভাবিক জীবনের ছকবাঁধা রুটিনে।

*গৃহিণী, কমলাপুর, ঢাকা