করোনাকালে বিনা মূল্যের পাঠাগার

‘পাঠশালা রাঙ্গুনিয়া উন্মুক্ত পাঠাগার’ এ বই দেখছেন এক তরুণ পাঠক। ছবি: প্রথম আলো
‘পাঠশালা রাঙ্গুনিয়া উন্মুক্ত পাঠাগার’ এ বই দেখছেন এক তরুণ পাঠক। ছবি: প্রথম আলো

পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠার সময়ে নিবন্ধন ফি রাখা হয় মাত্র ১০ টাকা। এই অর্থ দিয়েই সারা বছর বই বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে একদম বিনা মূল্যে বই পড়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্য একটাই, ঘরবন্দী সময়ে মানুষকে বইমুখী করা এবং বই পড়ার আনন্দকে সঙ্গী করে আলোকিত হওয়া।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ‘পাঠশালা রাঙ্গুনিয়া উন্মুক্ত পাঠাগার’ এই ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে। পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সবাই সদ্য পড়াশোনা শেষ করছেন বা শিক্ষার্থী। বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। পাঠাগারটি গড়ে তোলা হয়েছে উপজেলার থানা সদরের সৈয়দবাড়ি হরিণগেট এলাকায়।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শিশির মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেকে ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছেন। অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করে ঘরে বসে বই পড়তে উৎসাহ দিতে পাঠাগার থেকে বই নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

শিশির মোরশেদ আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে অনলাইনে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে পাঠকদের চাহিদা অনুযায়ী বই পৌঁছানো হতো। সেই সময় আমার নিজের ২০০ বই দিয়ে অনলাইন পাঠাগার শুরু করি। সপ্তাহে এক দিন কয়েকটি বইয়ের নাম গ্রুপে পোস্ট করতাম। পরে পাঠকদের চাহিদামতো বইগুলো বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হতো। এর জন্য কোনো টাকা নেওয়া হতো না।’

শিশির মোরশেদ চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাংলায় মাস্টার্স পাস করেছেন।

উপজেলার দূরদূরান্তে বই পৌঁছানো গেলেও বই ফেরত দেওয়া নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দেওয়ায় পাঠাগারটি ভাড়া ঘরে নির্দিষ্ট একটি স্থানে স্থাপন করা হয়। সেখানে বইয়ের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। পাঠাগারে এখন ২০ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। নতুনভাবে আরও প্রতিনিধি নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিনিধি পাঠক সৃষ্টি করতে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন। পাশাপাশি পাঠকদের কাছ থেকে বই ফেরত নিতেও সহযোগিতা করছেন। পাঠাগারে গল্প, কবিতা, বিজ্ঞানবিষয়ক বইসহ রকমারি বই রয়েছে। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যসহায়ক বই রাখা হবে বলে জানিয়েছেন পাঠাগার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা জানান, দুস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই বিনা মূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পাঠাগারের প্রতিনিধি সোহেল আরাফাত ও মো. আজগর বলেন, তাঁরা নিজেরা পাঠাগারের পাঠক। পাশাপাশি পাঠাগারের পাঠকদের বই দিতে বা ফেরত নিতে সহযোগিতা করেন। পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক রয়েছেন দুই শতাধিক। গত এক মাসে নতুনভাবে ৪০ জন পাঠক সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। তাঁরা করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে যেতে না পেরে পাঠাগার থেকে বই নিয়ে ঘরে বসে পড়ছেন।

চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা পাঠাগারের নতুন পাঠক আশিক হাসনাত বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিয়মিত পাঠাগার থেকে বই এনে পড়ছি। এর জন্য কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না। বই পড়ে সময় ভালো কাটছে।’

রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আবু সায়েম বলেন, ‘করোনাকালে ঘরে বসে বই পড়তে উৎসাহ দিতে তরুণেরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁদের উদ্যোগে খুশি হয়ে আমি পাঠাগারে ১৭টি বই উপহার দিয়েছি। এই পাঠাগারের মাধ্যমে প্রচুর পাঠক সৃষ্টি হবে বলে আশা করছি।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিনিধিরা মিলে পাঠাগারের ভাড়া ও অন্যান্য খরচ পরিশোধ করেন। চাহিদা অনুযায়ী বইয়ের অপ্রতুলতা ও পাঠাগারের জায়গা ছোট হওয়ায় পাঠাগারে বসে পাঠকেরা বই পড়তে পারেন না। পাঠাগারকে সমৃদ্ধ করতে আরও বড় পরিসর ও আরও বই প্রয়োজন।