ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হত্যা মামলার বাদীকে অপহরণের অভিযোগ

সিরাজগঞ্জে দলীয় কোন্দলে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ছাত্রলীগের নেতা এনামুল হক হত্যা মামলার বাদী রুবেল প্রামাণিককে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রুবেল প্রামাণিক নিহত এনামুল হকের বড় ভাই এবং সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চালা শাহবাজপুর এলাকার আবদুল কাদের প্রামাণিকের ছেলে। আজ রোববার সকালে জেলার কামারখন্দ জামতৈল বাজার এলাকা থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়। আজ দুপুরেই বগুড়ার শাজাহানপুর রহিমাবাদ উত্তরপাড়া জামে মসজিদ থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে দুপুরের দিকে ওই মসজিদের মুসল্লিরা জোহরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হতেই অসুস্থ অবস্থায় রুবেল এসে বলেন, ‘আমি অসুস্থ, আপনারা আমাকে সাহায্য করুন।’ এ সময় মুসল্লিরা তাঁর সুস্থতায় সহায়তা করেন। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ বিকেলে তাঁকে থানা হেফাজতে নিয়ে তাঁর স্বজনদের খবর দিলে রাতে স্বজনেরা এসে তাঁকে নিয়ে যান।

বগুড়ার শাজাহানপুর রহিমাবাদ উত্তরপাড়া জামে মসজিদের মুসল্লি নবীন সরকার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জোহরের নামাজ শেষে মসজিদের সামনে গেলে ওই যুবক দৌড়ে এসে আমাদের সাহায্য চান। এ সময় ছেলেটি খুবই আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন। ছেলেটি আমাদের জানান, “আমি অসুস্থ, মাথায় একটু পানি ঢালুন। মারপিট করে মাইক্রোবাস থেকে আমাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।” তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল বলেও সে আমাদের জানায়। এ সময় আমরা তাঁকে প্রাথমিকভাবে সেবাযত্ন করে মসজিদের মধ্যেই রেখে দিই। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বিকেলে তাঁকে নিয়ে যায়।’

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, রুবেলকে উদ্ধার করে তাঁর স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। তাঁর বাবা সন্ধ্যায় থানায় এসেছেন। আইনগত প্রক্রিয়ায় তাঁর কাছে রুবেলকে হস্তান্তর করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে কামারখন্দ থানায় অপহরণ মামলা হবে ।

রুবেলের বাবা আবদুল কাদের বলেন, ‘আজ (২ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে রুবেল জামতৈল বাজারে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। দুপুরে আমি খবর পাই ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার শাজাহানপুর থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে আমি সেখানে এসেছি। সেখান থেকেই আমার ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আইনগত প্রস্তুতি চলছে। বাড়িতে গিয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

গত ২৬ জুন মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে শহরের এম মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে যাওয়ার পথে বাজার স্টেশন এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারি হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হককে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। হামলার ঘটনায় এনামুলের বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন, শিহাব আহমেদসহ সংগঠনের পাঁচ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। এরপর ৫ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এনামুলের মৃত্যু হয়। এনামুল মারা যাওয়ার পর হামলার মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়ে যায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এনামুল মারা যাওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা হওয়ার পরই চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁদের মধ্যে বর্তমানে তিনজন জেলা কারাগারে এবং আল আমিন নামে একজন জামিনে আছেন। এ ছাড়া প্রধান আসামি শিহাব আহমেদ পলাতক। এ ঘটনায় মামলার আসামি জেলা ছাত্রলীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

দলীয় সূত্র জানায়, এরপর গত ৭ জুলাই নিহত ছাত্রনেতা এনামুল হক স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। এসব ঘটনায় পাল্টাপাল্টি আরও চারটি মামলা হয়েছে। এ ধরনের সংঘর্ষের কারণে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিলে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে গত ৮ জুলাই থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় তালাবদ্ধসহ আওয়ামী লীগের সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।