'বেড়াতে আইস্যা যেন ফাঁইস্যা গেছি'

ঈদ উপলক্ষে পাবনার বেড়া পৌরসভার হুরাসাগর পারে হাজারো মানুষের ঢল নামে। বেড়াতে আসা লোকজনের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো তাগিদই নেই। ছবিটি গতকাল রোববার তোলা। ছবি: প্রথম আলো
ঈদ উপলক্ষে পাবনার বেড়া পৌরসভার হুরাসাগর পারে হাজারো মানুষের ঢল নামে। বেড়াতে আসা লোকজনের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো তাগিদই নেই। ছবিটি গতকাল রোববার তোলা। ছবি: প্রথম আলো

মহামারির কারণে থমকে আছে সারা পৃথিবী। দেশের প্রায় সব কটি বিনোদনকেন্দ্রই দর্শনার্থীদের অভাবে খাঁ খাঁ করছে। কিন্তু পাবনার বেড়া পৌরসভার হুরাসাগর নদের পারে পোর্ট এলাকার দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঈদ উপলক্ষে এখানে দর্শনার্থীদের ঢল। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে হাজারো দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন। তবে বেড়াতে আসা বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্বের বদলে এখানে আছে ধাক্কাধাক্কি অবস্থা।

বেড়া পৌর এলাকার হুরাসাগর নদের পার দীর্ঘদিন ধরেই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয় একটি জায়গা। বর্ষায় এই নদ ফুলেফেঁপে অনেকটা সাগরের আমেজ সৃষ্টি করে। নদের পোর্ট নামক স্থানে দাঁড়ালে যেকারোই মন আনন্দে ভরে ওঠে। এই আনন্দ আরও বেড়ে যায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে নদের বুকে ঘুরে বেড়ানোর সময়। তাই পুরো বর্ষাজুড়েই ওই স্থানটিতে ভিড় লেগে থাকে ভ্রমণপিপাসুদের। আর ঈদ, পূজাসহ কোনো উৎসব এলে তো কথাই নেই। হুরাসাগর পারের গোটা পোর্ট এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের ভিড়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও এলাকাবাসী জানায়, বেড়া নৌবন্দর পুনরুজ্জীবিত প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে পাউবো বেড়া পৌর এলাকার ডাকবাংলোর পাশে বিশাল নৌঘাট নির্মাণ করে। নানা জটিলতার মুখে একপর্যায়ে পাউবো নৌবন্দর পুনরুজ্জীবিত প্রকল্পটি বাতিল করে। ফলে বাঁধানো ঘাটের অংশটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ওইভাবেই পড়ে থাকে এবং এর নাম হয় ‘পোর্ট’। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একপর্যায়ে স্থানটি ভ্রমণের আদর্শ জায়গা হিসেবে গড়ে ওঠে।

রোজার ঈদের সময় করোনাভীতির কারণে এই স্থানে অল্প লোকজন বেড়াতে এসেছেন। তবে কোরবানির ঈদে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এখানে। গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হুরাসাগর পারের পোর্ট এলাকায় তিল ধারণের জায়গা নেই। এই স্থানসংলগ্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। অনেকেই মাইক্রোবাস, কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছেন। এই স্থানের বিস্তৃত বাঁধানো ঘাট ও সড়কের ওপর মেলার মতো পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বাচ্চাদের খেলনা থেকে শুরু করে খাবারের অসংখ্য দোকান বসেছে।

বাঁধানো ঘাটজুড়ে অর্ধশতাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌকা দেখতে পাওয়া যায়। বেড়াতে আসা লোকজন সেগুলোতে করে হুরাসাগর নদের আশপাশে বেড়াতে যাচ্ছেন। কোনো কোনো নৌকায় গাদাগাদি করেও লোক তুলতে দেখা যায়। একটি নৌকার মাঝি আফান শেখ বলেন, ‘বেড়ানোর জন্যে লোকজনের এত ভিড় হবি, তা ভাবি নাই। আমাগরে আয় রোজগার খুব ভালো হতেছে।’

ঘুরে দেখা যায়, ওই এলাকায় শরবত, ফুসকা, চটপটিসহ অনেকগুলো খাবারের দোকান বসেছে। একই গ্লাস ও থালায় গণহারে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। লোকজন একে অন্যের সঙ্গে গা লাগিয়ে খাবার খাচ্ছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা কারও মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক।

শরবত বিক্রেতা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আজকের মতো এত বেচাকেনার দেখা খুব কমই পাইছি। খুব ভিড়। তাও ভালো কইর‌্যাই গেলাস ধোয়ার চেষ্টা করতেছি। ’

সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলা থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ঘরে বন্দী ছিলাম। তাই ঈদ উপলক্ষে আজ বেড়াতে বের হইছি। কিন্তু এই জায়গায় এত ভিড় হবি, তা ভাবি নাই। বেড়াতে আইস্যা যেন ফাঁইস্যা গেছি।’

বেড়া পৌর এলাকায় বসবাসকারী নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজশিক্ষক বলেন, ‘মানুষ অনেকটা ধৈর্য হারিয়ে এবারের ঈদে ঘর থেকে বাইরে বের হয়েছেন। তবে সবার উচিত ছিল মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মানা।’