ভৈরবে ঈদ বিনোদন: ফুরসতে জনগণের স্বস্তি, অসচেতনতায় প্রশাসনের অস্বস্তি

মেঘনা নদীর ভৈরব মোহনায় নির্মিত তিনটি সেতু এলাকায় মানুষের ঢল। তবে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা লক্ষ করা যায়নি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন মোল্লা
মেঘনা নদীর ভৈরব মোহনায় নির্মিত তিনটি সেতু এলাকায় মানুষের ঢল। তবে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা লক্ষ করা যায়নি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন মোল্লা

মেঘনা নদীর ভৈরব মোহনা। ওপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ। নদীর ওপর নির্মিত তিনটি সেতু দুই প্রান্তকে এক করেছে। বাড়িয়ে দিয়েছে নদীর সৌন্দর্য। তিনটির মধ্যে দুটি রেল, একটি সড়ক। সেতু তিনটিকে ঘিরে এরই মধ্যে মেঘনা নদীর ভৈরব মোহনা পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। উৎসবের দিন হলে তো কথাই নেই, মানুষের ঢল নামে। বিশেষ করে ঈদ উৎসব। বলা যায়, একশ্রেণির মানুষের ঈদ বিনোদনের মূল কেন্দ্র বিন্দু হয়ে ওঠে স্থানটি। ঈদে করোনাকালের ঘরবন্দী মানুষও ঘরে আটকে ছিল না। তবে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে ছিল না স্বাস্থ্যসচেতনতা। বিষয়টি দুশ্চিন্তার কারণ হলেও প্রতিকারে ছিল না কার্যকর উদ্যোগ।

প্রশাসন সূত্র জানায়, সেতু তিনটির চারপাশ সংরক্ষিত এলাকা। তারপরও মেঘনার স্বচ্ছ জল আর শীতল বাতাসের স্পর্শ পেতে প্রতিদিন অনেকে ছুটে আসেন। ঈদপরবর্তী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত দিনে গড়ে ৫০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। করোনা শুরুর পর স্থানটিতে মানুষের উপস্থিতি কমে আসে। ঈদুল ফিতরে স্থানটি ছিল মানুষ শূন্য। তবে ব্যতিক্রম ঈদুল আজহা। গতকাল রোববার দেখা যায়, কোথাও এতটুকু স্থান ফাঁকা নেই। কয়েকজন ছাড়া কারও মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ছিল না কোনো সুযোগ। পুলিশ প্রশাসনের কিছু সদস্যের উপস্থিতি থাকলেও তাঁদের পক্ষে তেমন কিছু করার ছিল না।

ভৈরব লাগোয়া উপজেলা কুলিয়ারচর থেকে বাইকে করে চার বন্ধু আসেন সেতুর পাড়ে। তাঁরা ছিলেন মাস্কবিহীন। জানতে চাইলে বিব্রত হন। পরে তাঁদের একজন বলে ওঠেন, ‘এখন তো করোনা নেই।’

সেতুপাড়ে মানুষের ওজন ও উচ্চতা মেপে জীবিকা নির্বাহ করেন রোমান আহমেদ। মানুষের বাড়তি চাপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাঁর ব্যবসায়ও। রোমান জানালেন, এই পর্যন্ত ৩৭৭ জনের ওজন মেপেছেন। কারও মুখে মাস্ক না থাকা নিয়ে আফসোস করলেও তিনিও ছিলেন মাস্কবিহীন।

ফুচকা ব্যবসায়ীদের এতটুকু ফুসরত লক্ষ করা যায়নি। ১২টি দোকানের সব কটিতে ছিল মানুষের উপচে পড় ভিড়। সারিতে দাঁড়িয়ে ফুচকা চটপটি গ্রহণ করছিলেন অনেকে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কারও মধ্যে সচেতনতা খেয়াল করা যায়নি। কাঁকন মিয়া আট বছর ধরে সেতুর পাড়ে ফুচকা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘ঈদে এত মানুষের সমাগম ঘটবে ধারণা করতে পারিনি। মানুষের চাপের কারণেই কোনো শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছে না।’

দুই সন্তানকে নিয়ে এক নারী ফুচকা খাচ্ছিলেন। তাঁদের মাস্ক ছিল না। জানতে চাইলে ওই নারীর উত্তর, ‘ঘরে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। স্বস্তি পাওয়ার জন্য নদীর পাড়ে এসেছি। স্বস্তির পাওয়ার আনন্দে অন্য কিছু মনে ছিল না।’

গতকাল ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন নিজেও একদল পুলিশ নিয়ে নদীর পাড়ে ছিলেন। মানুষের চাপ আর অসচেতনতা দেখে তিনি বিস্মিত ও বিব্রত হন। ওসি বলেন, রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয়ভাবে সারা দিনই সচেতনতামূলক নানা বিষয় প্রচার হচ্ছে। কিন্তু মানুষকে স্পর্শ করতে পারছে না। যদি পারত, তাহলে আজকে এমন দৃশ্য দেখতে হতো না। নদীর পাড়ের এই হাল সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘মানুষ স্বস্তি ফিরে পেলেও স্বাস্থ্যসচেতনতা না দেখে আমাদের অস্বস্তি বেড়েছে।’