শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন সঠিক নেতৃত্বে দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব: তথ্যমন্ত্রী

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্যে রাখছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্যে রাখছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, অনেক বিশেষজ্ঞের মতামতকে ভুল প্রমাণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারলে করোনাভাইরাসের মতো দুর্যোগও মোকাবিলা সম্ভব।

আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশের বিরোধী দল ঘরের মধ্যে বসে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে টেলিভিশনে উঁকি দিয়ে কথা বলে, ঘর থেকে বের হয় না। উঁকি দিয়ে কথা বলে সরকারের সমালোচনা করে। কিন্তু আমরা এক দিনও বসে ছিলাম না এবং জনগণের পাশে থাকতে গিয়ে আমাদের দলের অনেক নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী হতে পারে, সেটি মাথায় রেখে কাজ করেছি। সংকট মোকাবিলায় জনগণের পাশে থাকতে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এমন শিক্ষা দিয়েছেন।’

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম। এ সময় সিইউজে নেতারা তথ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের বিভিন্ন দাবিসংবলিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা মাথায় রেখে নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সাংবাদিকদের মধ্যে যাঁরা বেতন পাচ্ছেন না, যাঁরা চাকরিচ্যুত কিংবা দীর্ঘদিন ধরে বেকার—এই তিন ক্যাটাগরির সাংবাদিকদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য তিনি তাঁদের এককালীন সহায়তা প্রদানে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা প্রথম ধাপে সারা দেশে দেড় হাজার সাংবাদিককে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেছি। এটি এই দেড় হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, পরবর্তী পর্যায়ে আরও চেক বিতরণ করা হবে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমাদের আশপাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় সাংবাদিকদের এ ধরনের সহায়তা দেওয়া না হলেও এ দেশে তা হচ্ছে। সেখানে সহায়তা করা হচ্ছে শুধু যাঁরা করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের পরিবারকে। আমরাও করোনাভাইরাসের কারণে কোনো গণমাধ্যমকর্মী যদি মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তাঁদের পরিবারকেও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এককালীন তিন লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে তা দেওয়া হয়েছে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রথম মাসে সবকিছু বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অনেক কিছু খুললেও এখনো অনেক কিছু খোলেনি। কিন্তু সাংবাদিকদের কাজকর্ম কখনো বন্ধ ছিল না। সাংবাদিকেরা এই করোনাভাইরাসের মধ্যে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন, সংবাদ সংগ্রহ করেছেন, সংবাদ পরিবেশন করেছেন, যে কারণে পত্রিকা বের হয়েছে, টেলিভিশনে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। সাংবাদিক ভাইবোনেরা যদি এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ না করতেন, তাহলে পত্রিকায় ও টেলিভিশনের সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভবপর হতো না। এর জন্য বহু সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ভাইবোন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে শুরু থেকেই সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ার মালিকপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছিলাম, যাতে সাংবাদিক ভাইবোনদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো দেওয়া হয়। কারণ, করোনাভাইরাসে এমন কোনো সেক্টর নেই, যাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, কিন্তু এ পরিস্থিতি সাময়িক এবং এ সময়ে সুবিধা-অসুবিধা ভাগ করেই নেওয়া উচিত।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক দেশের তুলনায় সফল। সে জন্যই আমাদের দেশে মৃত্যুহার উন্নত দেশগুলোর চেয়ে তো কম বটেই, এমনকি আক্রান্তদের মৃত্যুহার ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও কম।’

পান থেকে চুন খসলেই হইহই রইরই করা সঠিক নয় উল্লেখ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রথম দিকে চট্টগ্রামে অনেক অসুবিধা ছিল, আইসিইউ বেড থেকে শুরু করে নরমাল বেডের সমস্যা ছিল। আজকে আইসিইউ বেড খালি আছে, নরমাল বেডও খালি। প্রথম দিকের পত্রপত্রিকায় যে সংবাদগুলো এসেছে, সেগুলো আমার চোখে পড়েছে। চট্টগ্রামে রোগী ৫০০ বেড আছে ৪০০—এ ধরনের খবর পরিবেশিত হয়েছে। অথচ করোনায় আক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগের বেশি রোগীকে হাসপাতালে যেতে হয় না।’

সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘সংবাদপত্র সমাজকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করার জন্য, সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেওয়ার জন্য, দায়িত্বশীলদের ভূমিকা যাতে আরও সঠিকভাবে পালন করতে পারে, সেই ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। সুতরাং যখন কাজের ত্রুটি হয়, সেটি অবশ্যই গণমাধ্যমে উঠে আসবে। যখন কাজ ভালো হয়, তখন সেটিও গণমাধ্যমে উঠে আসা প্রয়োজন। আজকে যে ভালো পরিস্থিতিতে আমরা আসতে পেরেছি, সেটিও গণমাধ্যমে উঠে আসা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

পরে চট্টগ্রাম বিভাগের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে করোনাভাইরাসসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন তথ্যমন্ত্রী। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বিসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।