ওজন মাপার যন্ত্রে বোমা, পুলিশকে আগেই জানিয়েছিলেন এক আসামি

পল্লবী থানা। ফাইল ছবি
পল্লবী থানা। ফাইল ছবি

গত ২৯ জুলাই দিবাগত রাত ১টা ৫৫ মিনিটে পল্লবীর কালশী কবরস্থানের দক্ষিণ পাশে অভিযান চালিয়ে রফিকুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তাঁদের দুই সহযোগী পালিয়ে যান। আসামি রফিকুল ও শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে অস্ত্র জব্দ করা হয়। আর মোশাররফের কাছে থাকা বাজারের ব্যাগের ভেতর ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিন জব্দ করা হয়। এরপর তিনজনকে পল্লবী থানায় নিয়ে আসা হয়।

রাত আড়াইটার সময় আসামি মোশাররফ পুলিশকে জানান, তাঁর কাছ থেকে ওজন মাপার যে মেশিন জব্দ করা হয়েছে, তাঁর ভেতর বোমা আছে।
পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলার কাগজপত্র থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মামলা দুটির তদন্তভার পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম। ১ আগস্ট থেকে মামলা দুটি তদন্ত শুরু করেছে সংস্থাটি। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপকমিশনার মো. আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তারা ‘ক্রিমিনাল গ্যাং’-এর সদস্য। দুদিন আগে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয় তদন্ত করা হবে।

পল্লবী থানার ভেতর বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। পল্লবী থানা-পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ৩০ জুলাই এই আদেশ দেন।

মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফারুকুজ্জামান মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, পল্লবী থানার বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মামলা দুটি তিনি দুদিন তদন্ত করেছেন। তবে মামলা দুটি কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পল্লবী থানার পুলিশ বলছে, পল্লবী থানার বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার অন্যতম আসামি রফিকুল ইসলামের (৪০) বিরুদ্ধে হত্যাসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে। ২০০৪ সালে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় এই মামলা হয়। এ ছাড়া শহিদুল ইসলাম ও মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গত বুধবার সকাল সাতটার দিকে পল্লবী থানার ভেতর বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পল্লবী থানার পুলিশের চার সদস্যসহ পাঁচজন আহত হন। গত মঙ্গলবার রাতে পল্লবী থানার পুলিশ পল্লবী-কালশী কবরস্থানে অভিযান চালায়। অভিযানে তিন ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। তাঁদের কাছ থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি গুলি ও একটি ডিজিটাল ওয়েট মেশিনের মতো ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। সেগুলো থানার ডিউটি অফিসারের রুমে রাখা হয়। সেদিন সকালে ডিজিটাল ওয়েট মেশিনের মতো ডিভাইসটি বিস্ফোরিত হয়। বোমা বিস্ফোরণে থানার দ্বিতীয় তলার একটি ঘরের জানালার কাচ ভেঙে যায়। ডিজিটাল ডিভাইসটির মধ্য বোমা রাখা ছিল। দুটি তাজা বোমা ছিল।

বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিরা হলেন পল্লবী থানার পরিদর্শক (অভিযান) ইমরানুল ইসলাম, উপপরিদর্শক (এসআই) সজীব খান, উপপরিদর্শক (এসআই) রুমি বেভরেজ হায়দায়, শিক্ষানবিশ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) অঙ্কুর কুমার ও বেসামরিক ব্যক্তি রিয়াজুল ইসলাম।

ডিএমপির একটি সূত্রের ভাষ্য, গ্রেপ্তার তিনজন শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত বাহিনীর সহযোগী। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, স্থানীয় এক রাজনীতিককে হত্যার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়।

মামলার পলাতক আসামি হলেন জনি ও আলমগীর।