সড়ক নিয়ে দলাদলি, আটকে আছে সংস্কারকাজ

এলাকাবাসীর দলাদলিতে আটকে আছে সড়কের সংস্কারকাজ। এতে দুর্ভোগে কয়েক হাজার মানুষ। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে কলাপাড়া মোড়ে। ছবি: প্রথম আলো
এলাকাবাসীর দলাদলিতে আটকে আছে সড়কের সংস্কারকাজ। এতে দুর্ভোগে কয়েক হাজার মানুষ। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে কলাপাড়া মোড়ে। ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের প্রবেশপথগুলোর একটি কলাপাড়া মোড়। এই মোড় থেকে পুরোনো কোর্ট হয়ে মূল শহরে গেছে একটি সড়ক। বেহাল সড়কটি সংস্কারের জন্য সম্প্রতি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের বাধার কারণে মোড়ের দিকে কিছু অংশের কাজ আটকে যায়। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে হাজারো মানুষকে।

স্থানীয়ভাবে এটি কলাপাড়া সড়ক হিসেবে পরিচিত। তাড়াইল উপজেলা, সদর উপজেলার নীলগঞ্জ, মহিনন্দ ইউনিয়নসহ আশপাশের লোকজন সড়কটি ব্যবহার করে। ব্যস্ততম এই সড়কে প্রতিদিন চলাচল করে শত শত যানবাহন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে সড়কটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মোড় থেকে শহরমুখী ২৪৩ মিটার সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪০ লাখ টাকা। সড়কের ১৭০ মিটার কাজ শেষ করেন ঠিকাদার। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের বাধার কারণে মোড়ের দিকে বাকি ৭৩ মিটারের কাজ আটকে যায়।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মচারীর বাধার কারণে কাজটি শেষ করতে পারছেন না ঠিকাদার মো. শামসুদ্দিন। তিনি বর্তমানে ট্রেজারি শাখায় কর্মরত। তাঁর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কয়েক ব্যক্তি।

এদিকে প্রতিবন্ধকতা দূর করে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির বাকি কাজটুকু শেষ করতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন চারজন জনপ্রতিনিধি। তাঁরা হলেন জেলা পরিষদের সদস্য সাজ্জাদুল ইসলাম, মহিনন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনসুর আলী, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার ও মহিনন্দ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল হালিম।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুটি দলের সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. শামসুদ্দিন। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য সাজ্জাদুল ইসলামসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। এই বিরোধ দিন দিন বাড়ছেই। ফলে এখন আর কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন।

শামসুদ্দিন বলেন, যেভাবে সড়কটি করা হচ্ছে, তাতে তাঁর বাসায় রাস্তার পানি ঢুকে যাবে। শুধু তাঁর নয়, আরও কয়েকজনের একই সমস্যা হবে। এখানে রাস্তা নির্মাণ করার আগে নালা করতে হবে, এটুকুই তাঁদের দাবি। কাজে বাধা দেননি।

সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, এক-দুজনের বাধার কারণে পুরো এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কাজ বন্ধ থাকতে পারে না। মাত্র ৭৩ মিটার রাস্তার জন্য এ বর্ষায় পুরো এলাকার লোকজন দুর্ভোগে রয়েছে।

এলজিইডির প্রকৌশলী মো. জোনায়েত আলম বলেন, সড়ক বানাতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাঁরা মারামারি করতে পারেন না। তাঁরা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও বাধার কারণে রাস্তার কাজ শেষ করতে পারেননি। গত জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজের সময় বাড়ানো হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল কাদির মিয়া বলেন, সড়কটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। দুই পক্ষই প্রশাসনের কাছে তাদের নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করে আবেদন করেছে। তবে সড়কের কাজ শেষ হওয়া জরুরি। জায়গা চিহ্নিত করে বাকি কাজটুকু দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।