তীব্র স্রোতে বন্ধ রাখতে হচ্ছে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথ

চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ওই নৌপথে দিনে ২০ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফেরি বন্ধ থাকায় শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ও চাঁদপুরের হরিণা ঘাটে যানবাহন আটকা পরেছে। বিপাকে পড়েছেন যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।

বাাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চট্রগ্রাম অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথ ব্যবহার করে। এই জেলাগুলোতে একাধিক নৌ ও স্থলবন্দর থাকায় পথটি অনেক জনপ্রিয়। নৌপথে যানবাহন পারাপারের জন্য সাতটি কে-টাইপ ফেরি রয়েছে। যা দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় চার শতাধিক যানবাহন পারাপার করা হতো।

গত এক মাস ধরে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীতে পানি বাড়ছে। এ কারণে নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছিল। আগে ২৪ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হতো। কিন্তু গত দুই দিনে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল করছে আর ২০ ঘণ্টাই বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে হরিণা ঘাট থেকে চারটি ফেরি ছেড়ে মাঝ নদীতে গেলে স্রোতের কারণে আটকে যায়। নরসিংহপুর যেতে না পেরে তা আবার হরিণা ঘাটে ফিরে যায়। সারারাত আর কোনো ফেরি চলাচল করতে পারেনি। আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে নদীতে জোয়ার এলে নরসিংহপুর ঘাট থেকে দুটি ফেরি হরিণা ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপর আর কোনো ফেরি কোনো ঘাট থেকে ছেড়ে যায়নি।

বিআইডব্লিউটিসির চাঁদপুরের হরিণা ঘাটের ব্যবস্থাপক ফয়সাল আলম বলেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফেরি চালাতে অসুবিধা হচ্ছে। এখন তো নদীতে স্রোত বেশি, তাই ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। জোয়ারের সময় স্রোত একটু কম থাকে। তখন আবার ফেরির পন্টুনের এ্যাপ্রোজ সড়ক তলিয়ে যায়। তখন গাড়ি ওঠা–নামা করতে পারে না। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় হরিণা ঘাটে তিন শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর স্রোত একসঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নৌযান চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় পানি বিপৎসীমার ৪৬-৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই মোহনা থেকে ফেরিঘাট ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে। নদীর এমন অবস্থা আরও সপ্তাহখানেক থাকার সম্ভবনা আছে।

চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে যশোর যাওয়ার জন্য চাঁদপুরের হরিণা ঘাটে দুই দিন ধরে অপেক্ষা করছেন ট্রাকচালক খলিলুর রহমান। দুই দিনে চারটি ফেরি যেতে পেরেছে হরিণা ঘাট থেকে। ঘাটে অনেক গাড়ি থাকায় তিনি ফেরিতে উঠতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘স্রোতের ভয়ঙ্কর শব্দ তীর থেকে পাওয়া যায়। আল্লাহই জানেন কত দিন লাগবে এ অবস্থা স্বাভাবিক হতে।’

বিআইডব্লিউটিসির শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এর আগে জোয়ারের সময় এপ্রোজ সড়ক তলিয়ে যেত। তখন ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতাম। আর এখন নদীতে অনেক স্রোত থাকায় ফেরি উঠতে পারে না। জোয়ারের সময় স্রোত কম থাকে, তখন ফেরি চালানোর চেষ্টা করা হয়। সারা দিনে সকালে একবার ও সন্ধ্যায় একবার জোয়ার হয়, নদীতে তখন দুই-তিনটা ফেরি চালানো যাচ্ছে।’