চোখ থাকতেও প্রতিবন্ধী ভাতা, স্বামী থাকতেও বিধবা ভাতা

প্রতিবন্ধী ভাতা পান আবদুল হান্নান। নিজেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দাবি করলেও আসলে তিনি তা নন। একটা চোখ সামান্য ট্যারা, এই যা। তাঁর স্ত্রী লাভলী আক্তারও সরকারি ভাতাভোগী। তিনি আবার দিব্যি স্বামী থাকতেও ভাতা নেন বিধবা হিসেবে।

এই দম্পতির বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমুদপুর গ্রামের বাসিন্দা। আবার পেশায় কৃষক আবদুল হান্নান অনেকটা সচ্ছল ব্যক্তি বলে জানিয়েছেন স্বয়ং স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি।

জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ উদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সুস্থ মানুষ প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন, স্বামী থাকতেও বিধবা ভাতা নেবেন, এ ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। বিষয়টি তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

গত সোমবার বিকেলে আমুদপুর গ্রামে যান এই প্রতিবেদক। এ সময় আবদুল হান্নানকে বাড়ির সামনে পাওয়া যায়। তিনি নিজেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বলে দাবি করেন। তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আঞ্জু মিয়া বলেন, হান্নান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নন। তাঁর ডান চোখটি সামান্য ট্যারা। হান্নান পেশায় একজন কৃষক। তাঁর নিজের জমি আছে। এ ছাড়া অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। এমন একজন কীভাবে প্রতিবন্ধীর তালিকায় নাম উঠিয়েছেন, তা তিনি বলতে পারেন না।

হান্নান নিজেই স্বীকার করেন, লাভলী আক্তার তাঁর স্ত্রী। তবে লাভলী বিধবা ভাতা নেন কি না জানতে চাইলে হান্নান বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। ভাতার অর্থ তুলতে তাঁর স্ত্রীকে কখনো ব্যাংকে যেতেও দেখেননি তিনি। বাড়ির ভেতরে গিয়ে স্ত্রী লাভলীকে পাওয়া যায়। বিধবা ভাতা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে লাভলীর কয়েকজন স্বজন বলেন, সরকারি ভাতা পেতে হলে একটা কিছু বলতে হয়। তাই তিনি নিজেকে বিধবা দেখিয়ে তালিকায় নাম উঠিয়েছেন।

মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের উপকারভোগীরা ভাতার টাকা তোলেন কৃষি ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে। সোমবার বিকেলে ওই শাখায় গিয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপক মো. আবদুল বারী বলেন, লাভলী আক্তার গত ২৬ জুলাই ব্যাংকে এসে ভাতার অর্থ উত্তোলন করেছেন।

নান্দাইল সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন বয়সী প্রায় চার হাজারের বেশি মানুষ প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। সুস্থ অনেকে প্রতিবন্ধী সেজে উপকারভোগীর তালিকায় নাম তুলেছেন, এমন অভিযোগ তাঁদের কাছেও এসেছে। সম্প্রতি উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের ছয়জন সুস্থ ব্যক্তির কাছে প্রতিবন্ধী ভাতার পাসবই পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। পরে পাসবইগুলো ফেরত নিয়ে অন্য প্রতিবন্ধীর নামে ভাতা বরাদ্দ দিয়েছে সমাজসেবা কার্যালয়।

নান্দাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইনসান আলী প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকের দেওয়া সনদপত্রের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি শারীরিক প্রতিবন্ধী কি না, তা নির্ধারণ করা হয়। এমন সনদের ভিত্তিতেই লোকজনকে এই তালিকাভুক্ত করা হয়। নাম তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন অসংগতি ধরা পড়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে শোধরানো হয়। আমুদপুর গ্রামের ঘটনাটিও তদন্ত করে তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।