হাওরে ট্রলারডুবির ঘটনায় আরও এক লাশ উদ্ধার, তদন্ত কমিটি

ট্রলারডুবিতে নিহত ব্যক্তির লাশ নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। বুধবার সন্ধ্যায় নেত্রকোনার মদন থানা প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো
ট্রলারডুবিতে নিহত ব্যক্তির লাশ নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। বুধবার সন্ধ্যায় নেত্রকোনার মদন থানা প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার মদনের রাজালিকান্দা হাওরে ট্রলারডুবির ঘটনায় আরও এক মাদ্রাসাশিক্ষকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই হাওর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মদনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার লাশ উদ্ধার হয়েছে মো. রাকিবের (২০)। তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়নের কোনাবাড়ী গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে। এ নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১৮।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় জেলেরা রাজালিকান্দা হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে হাওরে একটি লাশ ভাসতে দেখেন। তাঁদের মাধ্যমে খবর পেয়ে থানা থেকে একদল পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। পরে সেটি রাকিবের লাশ বলে তাঁর স্বজনেরা শনাক্ত করেন। রাকিব মদনের পার্শ্ববর্তী আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতি এলাকার (গৃদান টেঙ্গা) জামিআ আরাবিয়া মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। দুর্ঘটনায় রাকিবের বাবাসহ তাঁর পরিবারেরই সাতজন মারা গেছেন।

বুধবার দুপুরে মাদ্রাসাশিক্ষক ও ছাত্র ৪৮ জনের একটি দল উচিতপুর ঘাট থেকে একটি ট্রলারযোগে হাওরভ্রমণে বের হন। ট্রলারটি রাজালিকান্দা হাওরে প্রচণ্ড বাতাস ও ঢেউয়ের কবলে পড়ে উল্টে যায়। এতে মারা যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জনের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া ও চরখরিচা গ্রামে। বাকি দুজনের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে।

এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য জেলা প্রশাসন চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ কমিটির প্রধান হয়েছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন জরুরি সভা করে উচিতপুর ট্রলারঘাট থেকে নৌযান চলাচলে নিয়মকানুন বেঁধে দিয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছোট নৌযানে পর্যটক পরিবহন করা যাবে না। আর বড় নৌযানগুলো লাইফ জ্যাকেট, বয়া প্রভৃতি ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করে চলতে পারবে। বড় নৌকাগুলোতেও কোনো অবস্থাতেই ২০ জনের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। এ ছাড়া উচিতপুর এলাকায় সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক পুলিশি নজরদারি থাকবে। নৌযানগুলোর তদারক করবে নৌ পুলিশ।

ইউএনও বুলবুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৪টি নৌযানের মালিককে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া উচিতপুরের অদূরে বালই সেতুর পাশের কফি হাউসসহ কয়েকটি দোকান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটি উদ্ধার করা হলেও এর চালক লাউত মিয়া পলাতক। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রমিজুল হক বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ না করায় কোনো মামলা হয়নি।