বন্যায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে কৃষক

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। আজ বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরের নড়িয়ার খালাসিকান্দি গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। আজ বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরের নড়িয়ার খালাসিকান্দি গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার খালাসিকান্দি গ্রামের কৃষক আলী আকবর খান গবাদিপশু লালন–পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গাভির দুধ বিক্রি করে সংসারের খরচ ও পশুদের খাবার জোগাতে হয় তাঁকে। এই মুহূর্তে তাঁর দুটি গাভিতে দুধ দেয়। কিন্তু বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় গাভির দুধ দোহন করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন তিনি। দেড় মাস যাবৎ পানিবন্ধী থাকায় অন্য কোনো কাজও করতে পারছেন না। কোনো সহায়তা না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে–অনাহারে দিন পার করছেন। গো-খাদ্যের সংকট থাকায় তাঁর পাঁচটি গরুও অর্ধাহারে-অনাহারে থাকে।

বন্যার পানিতে শরীয়তপুরের ৪৫টি ইউনিয়নের ৪০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলোর ৩ হাজার ৬০০ গবাদিপশুর খামারির ও ৮ হাজার কৃষকের ৪০ হাজার গরু-ছাগল পানিবন্ধী অবস্থায় আছে। ওই এলাকার ১০ হাজার একর গোচারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গো–খাদ্যের সংকটে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা।

আলী আকবর খান বলেন, ‘আমরা একবেলা খাবার না পেলে ক্ষুধায় ছটফট করি। বোবা প্রাণী ক্ষুধার জ্বালা নীরবে সহ্য করে, কিছু তো বলতে পারে না। আয় না থাকায় নিজেরাই খাদ্যের সংকটে পড়েছি। বন্যায় আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন গবাদিপশু বাঁচিয়ে রাখতে পারব কি না, আল্লাহই জানেন।’

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও সদর উপজেলায় ৮ হাজার কৃষক ও ৩ হাজার ৬০০ খামারির ৪০ হাজার গরু-ছাগল বন্যায় পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত ৪০০ গ্রামে ১০ হাজার একর গোচারণ ভূমি ও কাঁচা ঘাসের জমি তলিয়ে গেছে।
গোচারণ ভূমি ও ঘাস উৎপাদনের জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা। বসতবাড়িতে উঁচু মাচায় বসতঘরের খাটে গবাদিপশুদের রাখতে হচ্ছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

নড়িয়ার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের ওমর ফারুক চৌকিদারের ছয়টি গাভি। বন্যায় অসুস্থ হয়ে একটি গাভি মারা গেছে। আরেকটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ সময়ই পানিতেই রাখতে হয় গরুগুলোকে।

ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, গাভির দুধে সংসার চলে। দেড় মাস যাবৎ এলাকায় বন্যা। এর মধ্যে এক মাস ধরে গাভির দুধ দোহন করতে পারছি না। আয় বন্ধ, সংসারের খরচ জোগাতে ঋণ করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে একটি গাভি মারা গেছে। টাকার অভাবে গাভিগুলোকেও কোনো শুকনা খাবার কিনে খাওয়াতে পারছি না। জমানো খড় আর কচুরিপানাই এখন ভরসা। বাড়িতে একটি জায়গা উঁচু করেছি, যেখানে একসঙ্গে পাঁচটি গাভি রাখতে পারি না। তাই পালাবদল করে তাদের উঁচু স্থান ও পানিতে রাখতে হচ্ছে। বন্যায় আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বনগুলো মরতে বসেছে।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমাসার গ্রামের কামাল হোসেন গবাদিপশুর খামারি। তাঁর খামারে প্রস্তুত করা গরু ঈদে বিক্রি করেন। এ বছর ঈদে কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি। ৮টি গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক এ খামারি।

কামাল হোসেন বলেন, ‘এলাকার কাঁচা ঘাসের জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে, অন্য সোর্স থেকেও গো–খাদ্য পাচ্ছি না। বাড়িতে পানি। নিজেরা পানিতে কষ্ট করে থাকলেও গরুগুলোকে উঁচু স্থানে রেখেছি। কিন্তু তাদের খাবার জোগাতে খুব বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বন্যা ও বন্যা–পরবর্তী যে রোগবালাই তার থেকে গরুগুলোকে বাঁচাতে পারব কি না, আল্লাহই জানেন।’

জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুবোধ কুমার দাস বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় গবাদিপশুর অনেক ক্ষতি হবে। কাঁচা ঘাসের উৎস নষ্ট হওয়ায় মারাত্মক গো-খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকের হাতে টাকা না থাকায় শুকনা খাবারও অনেকে কিনে দিতে পারছেন না। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে শুকনা খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর যাতে রোগবালাইয়ে আক্রান্ত না হতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।