শিমুলিয়ার আরও একটি ফেরিঘাট পদ্মায় বিলীন

পদ্মার তীব্র স্রোতে শিমুলিয়ার ৪ নম্বর ঘাটটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে বিআইডব্লিউটিএ। ৬ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
পদ্মার তীব্র স্রোতে শিমুলিয়ার ৪ নম্বর ঘাটটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে বিআইডব্লিউটিএ। ৬ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় আবারও পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দফা ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে গেছে ৪ নম্বর ফেরিঘাটটি। এখন মাত্র একটি ঘাট দিয়ে পারাপার চলছে।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ভাঙন শুরু হয়। সাত ঘণ্টার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ফেরিঘাটটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ নিয়ে মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে দুই দফা ভাঙনে শিমুলিয়ার চারটি ফেরিঘাটের মধ্যে দুটি পদ্মায় বিলীন হলো। গত ২৮ জুলাই ভেঙে যায় ৩ নম্বর রো রো ফেরিঘাটটি। ভাঙনঝুঁকিতে আছে ২ নম্বর ঘাটটিও।

বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশলী আবু দাউদ সরকার জানান, গতকাল রাত আড়াইটার দিকে ভাঙন শুরু হয়। আজ সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ভাঙন অব্যাহত ছিল। এর মধ্যেই ৪ নম্বর ভিআইপি ফেরিঘাট, বৈদ্যুতিক খুঁটি, লোহার বেড়া, সংযোগ সড়কসহ সাড়ে তিন একর জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দুই দফা ভাঙনে মসজিদ, দোকান, অফিস, ১৬টি বৈদ্যুতিক খুঁটি, টয়লেটসহ ঘাটের সাড়ে সাত একর জায়গা নদীগর্ভে চলে গেছে। যেকোনো সময় ২ নম্বর ঘাটেও ভাঙন ধরতে পারে। বালুর ব্যাগ ফেলে সেটি রক্ষার চেষ্টা চলছে।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দেখা যায়, ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট ভেঙে একসঙ্গে মিশে আছে। সদ্য ভেঙে যাওয়া ৪ নম্বর ঘাটটিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ঘাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সদস্যরা যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙন দেখতে উৎসুক জনতা ঘাটে ভিড় জমিয়েছে।

ঘাটের স্থানীয়রা জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি পদ্মা নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে। প্রচণ্ড স্রোত ও পানি বৃদ্ধির কারণে পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ২৮ জুলাই সবচেয়ে বড় (রো রো) ফেরিঘাট ভেঙে যায়। সে ঘাটের পন্টুন ঈদের দুই দিন আগে ৪ নম্বর ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল রাতে আকস্মিক ভাঙনে ৪ নম্বর ঘাটও নদীগর্ভে হারিয়ে গেল।

প্রত্যক্ষদর্শী ঘাটের নৈশপ্রহরী মো. আলভি জানান, রাতে তিনি ঘাট এলাকায় পাহারা দিচ্ছিলেন। মধ্যরাতে মানুষের চিৎকার শুনে ৪ নম্বর ঘাটে যান। দেখতে পান ঘাট ও রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। ঘাটের সঙ্গে যাঁদের ছোট দোকান ছিল, সেগুলো তাঁরা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। একটু করে ভাঙতে ভাঙতে কয়েক ঘণ্টায় সম্পূর্ণ ঘাটটি বিলীন হয়ে যায়।

ঘাটের কয়েকজন যাত্রী বলেন, শিমুলিয়ার চারটি ঘাটের মধ্যে দুটি বিলীন। ২ নম্বরও ঘাটও বন্ধ। যেকোনো সময় অন্য দুটি ঘাটও ভেঙে যেতে পারে। শিমুলিয়া পুরোনো ঘাটের মতো অবস্থা হতে পারে। এতে যেকোনো সময় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হতে পারে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. হিলাল উদ্দিন দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, শুধু ১ নম্বর ঘাট দিয়ে পারাপারে কাজ চলছে। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট নদীতে বিলীন হয়েছে। ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ আছে। এ ঘাটে পারের অপেক্ষায় শতাধিক যানবাহন রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, নাব্যতাসংকট ও স্রোতের কারণে এক মাস ধরে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায় রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ৪ নম্বর ঘাট ভাঙনের ফলে তিন ঘণ্টার বেশি সময় শিমুলিয়া নৌ চলাচল বন্ধ ছিল। সকাল সাড়ে ১০টার পর ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। ১ নম্বর ঘাটটি সচল রয়েছে। মাত্র চারটি ফেরি চলছে।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবিরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, এ মাসের শেষ দিকে আরও একটি বন্যার আভাস রয়েছে। মূলত স্রোতের কারণেই নদী ভাঙছে। ইতিমধ্যে দুটি ঘাট বিলীন হয়ে গেছে। শিমুলিয়া ঘাটকে সচল রাখতে ভেঙে যাওয়া ৩ নম্বর ঘাটকে মেরামত করা হচ্ছে। দুই নম্বর ঘাটটিকে ভাঙন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রী ও পরিবহনচালকদের বিকল্প পথ হিসেবে আরিচা ঘাট ব্যবহারের জন্য বলা হচ্ছে।

শিমুলিয়া ঘাটে বেড়েছে যাত্রীদের দুর্ভোগ ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ঘাটে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। যাত্রী ও পরিবহনচালকদের ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

বিকেল চারটার দিকে দেখা যায়, শুধু ১ নম্বর ঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করায় ঘাট এলাকায় শতাধিক যাত্রীবাহী বাস, ছোট প্রাইভেট কার, ট্রাক ও মোটরসাইকেল পারাপারের অপেক্ষায় আছে। তবে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মাদারীপুর ঘাট থেকে আসা প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের তুলনায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।

এ সময় এস এ পরিবহনের চালক আক্কাশ জানান, ‘বুধবার রাতে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে আসি। সকাল পেরিয়ে দুপুর, এখন বিকেলও যাচ্ছে। ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পাইনি। এদিকে বাসে বসে থেকে যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে অনেকে চলে গেছে।’

প্রাইভেট কারের যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে ঘাটে এসেছি। শুনলাম মাত্র চারটি ফেরি চলছে। কখন নদী পার হতে পারব, জানা নেই।’