'আমি তাঁর যথাযোগ্য শাস্তি চাই'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সহকারী কমিশনার (ভূমি) সারোয়ার সালামের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী খাদিজা আক্তার সন্তানের ভরণপোষণ না দেওয়া, মারধর, স্বামীর এক নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থাকা, দ্বিতীয় বিয়ে করাসহ একাধিক অভিযোগ করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

সারোয়ার সালাম বর্তমানে নোয়াখালীর হাতিয়ায় কর্মরত। এর আগে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে কর্মরত ছিলেন।

সারোয়ার সালামের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারোয়ার সালামের স্ত্রীর করা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণ না দেওয়া, স্ত্রীকে মানসিক নির্যাতন, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থাকা, স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার হুমকির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। যৌতুক দাবির অভিযোগে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা বিচারাধীন আছে।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে করা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ষড়যন্ত্র ও প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। সারোয়ার সালাম খাদিজা আক্তারকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন কি না, তার জন্য বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসক বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মতামত প্রয়োজন। এ তদন্তের তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়ম। গত ২০ জানুয়ারি সারোয়ার ও খাদিজা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন।

২৫ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব ছাইফুল ইসলামের সই করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সারোয়ার সালামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে তাঁর স্ত্রী খাদিজা আক্তার আবেদন করেন গত বছরের ২০ অক্টোবর। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (রাজস্ব) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন। বিভাগীয় কমিশনার প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে গত ৩ মার্চ সই করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খাদিজা আক্তার মুঠোফোনে কথোপকথনের আটটি অডিওর সিডি জমা দিয়েছিলেন। সারোয়ার সালামও এসব অডিও তাঁর বলে স্বীকার করেছেন। কথোপকথনে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়ে অভিযুক্ত নারীর নাম উল্লেখ করেন খাদিজা, সারোয়ার সালাম তখন কোনো মন্তব্য করেননি। শুধু একটি অডিওতে সারোয়ার সালাম তাঁর বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করেন। খাদিজাকে শারীরিক মারধর করেছেন, তার প্রমাণ হিসেবে মারধরের পর তোলা কয়েকটি ছবিও জমা দিয়েছিলেন খাদিজা।

খাদিজা আক্তার মুঠোফোনে জানান, তাঁর মেয়ের বয়স এখন ৩ বছর ৪ মাস। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে সারোয়ার সালাম তাঁর ও মেয়ের কোনো ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। বর্তমানে রাজধানীর ডেমরায় থাকেন খাদিজা।

খাদিজা বললেন, ‘মা ও মেয়ে আমাদের দুজনের জীবনই কষ্টে কাটছে। সর্বশেষ শুনানিতে গিয়ে শুনেছি সারোয়ার নাকি আমাকে তালাক দিয়েছেন, অথচ আমি এর কোনো নোটিশ পাইনি। কাবিনের কপি দেখাতে পারিনি বলে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি প্রমাণ করতে পারিনি। তবে সারোয়ার এবং অভিযুক্ত নারী কর্মকর্তার হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোনের রেকর্ড, খুদে বার্তাগুলো দেখলেই আমার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যাবে। বর্তমান তদন্তে সারোয়ারের বিরুদ্ধে করা বেশির ভাগ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আমি তাঁর যথাযোগ্য শাস্তি চাই।’

স্ত্রীর করা বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে সারোয়ার সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত তদন্ত হয়েছে তিনটি। এর আগে সর্বশেষ শুনানিতে আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছিল না। আদালতেও আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান, সে মামলায় জামিনে আছি। বিভাগীয় শুনানির জন্য ৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়েছিলাম, আবার বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে আমি জেনেছি। আমি এখনো বলছি, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হলে আমার বিচার হবে। আর স্ত্রীর সঙ্গে আমার তালাক হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিয়ের যে অভিযোগ, তার কোনো সুযোগই নেই। যে নারীর সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে, তিনি আমার কলিগ, এর বাইরে আর কোনো সম্পর্ক নেই।’

খাদিজা তালাকের কোনো নোটিশ পাননি, এ বিষয়ে সারোয়ার সালাম বলেন, ‘নোটিশ পেয়েও মিথ্যা কথা বললে আমার কিছু করার নেই।’
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সারোয়ার সালাম গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন বলে উল্লেখ করলেও গত বছরের ৬ নভেম্বর সারোয়ার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি গোপন করেছিলেন। তবে এতে খাদিজা তালাকের হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ করেছিলেন, সে বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

মেয়ের প্রসঙ্গে সারোয়ার সালাম বলেন, ‘খাদিজার সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের বনিবনা হয়নি। ঝামেলার শুরু তখন থেকেই। মেয়েকে দেখতে চাইলে বা মেয়ের জন্য কিছু পাঠাতে চাইলেও খাদিজা ও তার পরিবার বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। অথচ আমি মেয়ের কথা চিন্তা করে সংসার টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তা আর হলো না। এখন আমি আমার মেয়ের জন্য সব দায়িত্ব পালন করতে চাই।’ তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন।