তারাগঞ্জে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খড়

কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে গরুর অন্যতম খাবার খড়। বাসস্ট্যান্ড এলাকা, তারাগঞ্জ, রংপুর, ৭ আগস্ট। ছবি: রহিদুল মিয়া
কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে গরুর অন্যতম খাবার খড়। বাসস্ট্যান্ড এলাকা, তারাগঞ্জ, রংপুর, ৭ আগস্ট। ছবি: রহিদুল মিয়া

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় গরুর অন্যতম খাদ্য খড়ের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি খড় বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। খড় কিনতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গরুর খামারিরা। এবার টানা বৃষ্টিতে বোরো ধানের খড় শুকাতে না পারায় এবং আমন ধানের খড় বেশি পরিমাণে পচে যাওয়ায় খড়ের এই সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তারাগঞ্জে গাভির খামার আছে দুই শতাধিক। গরু মোটাতাজাকরণ খামার আছে ৯০টি। পারিবারিকভাবে গরু পালন করা হচ্ছে ৭৫ হাজার ৮৭০টি। এসব পশুকে চার মাস বোরো ধানের খড় ও আট মাস আমন ধানের খড় খাওয়ানো হয়। এবার বোরোর মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বোরো ধানের খড় কৃষকেরা শুকাতে পারেননি। ফলে পচে গেছে বিপুল পরিমাণ খড়। এতে উপজেলায় খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার উপজেলার ইকরচালী, ডাঙ্গীরহাট, কাজীরহাট, চিকলী, বুড়িরহাট, তারাগঞ্জ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে অস্থায়ী খড়ের বাজার। সেখানে প্রতি কেজি আমন ধানের খড় ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

তারাগঞ্জ বাজারে খড় কিনতে আসা অনন্তপুর গ্রামের গরুর খামারি মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই, মুই এবার বোরোর একনা খড়ও শুকপার সুযোগ পাও নাই। সউগ পানিত পচি গেইছে। আমনের যেকনা খড় আছলো তাকও শেষ। এ্যালা গরু–বাছুর নিয়া খুব বিপদে আছুন। প্রতিদিন বাজার থাকি ২৫ টাকা কেজি দরে কাড়িয়া (খড়) কিনি কিলাওছুন। মোর মতোন হামার গ্রামের সোবায় এবার খড় কিনি গরুক খিলাওছে।’

সরকারপাড়া গ্রামের আরেক খামারি হাসু সরকার বলেন, ‘ভাইজান এ্যালাতো সউগ মাঠোতে ফসল চাষ হওছে। গরু চড়ার কোনো জায়গা নাই। খেতের আইলোত যেকনা ঘাস হয় তাক তো ওষুধ দিয়া নষ্ট করোছে। কায়ও কায়ও হাইব্রিড ঘাস চাষ করোছে। কিন্তু বাজারে সেই ঘাসেরও খুব দাম। ঘাসের আঁটি (দেড়-দুই কেজি) বেছাওচে ২৫-৩০ টাকা। গরুর ভুসি, ফিডের দামও বাড়ছে মেলা। করোনা আর বানের তকনে হাটোত গরুর দাম কমি গেইছে। গরুক নিয়া মহা যন্ত্রণায় আছি। না পাওছি বেচপার, না পাওছি ঠিক মতোন খাওয়ার দিবার।’

ইকরচালী বাজারে কথা হয় খড় ব্যবসায়ী মোজাহার ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনাজপুরের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ থেকে খড় কিনে এনে তিনি বিক্রি করছেন। এবার খড়ের দাম বেশি। দূর থেকে খড় কিনে নিয়ে আসায় পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে। বাধ্য হয়ে কেজি দরে খড় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি কেজি খড় তিনি বিক্রি করেছেন ২৪ থেকে ২৫ টাকায়। তবু আগের মতো লাভ হচ্ছে না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গরুর প্রধান খাবার ঘাস ও খড়। আগের মতো মাঠঘাট ফাঁকা নেই, নেই ঘাস। এবার বৃষ্টির কারণে বোরোর খড় কৃষকেরা শুকাতে পারেননি। সংরক্ষণ করা আমনের খড়ও কিছু অংশ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে উপজেলায় খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে।