লালন হত্যাকাণ্ড: দেড় মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি মূল আসামি

আলোচিত লালন হত্যাকাণ্ডে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। প্রেসক্লাব মিলনায়তন, মানিকগঞ্জ, ৭ আগস্ট। ছবি: আবদুল মোমিন
আলোচিত লালন হত্যাকাণ্ডে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। প্রেসক্লাব মিলনায়তন, মানিকগঞ্জ, ৭ আগস্ট। ছবি: আবদুল মোমিন

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় অপহরণের পর লালন দেওয়ানকে (৩৮) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার মূল আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। পরিবারের দাবি, লালনকে অপহরণের বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলেও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নেওয়ায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হলে প্রায় দেড় মাসেও মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো মামলা তুলে নিতে তাঁদের চাপ ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

শুক্রবার দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই শঙ্কার কথা জানান নিহত লালনের স্বজনেরা। আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা। সংবাদ সম্মেলনে নিহত লালনের স্ত্রী মমতাজ বেগম, মেয়ে তৃষা আক্তার, দুই ভাই হাবিবুর রহমান ও হালিম দেওয়ান উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে নিহত লালনের পাঁচ বছরের শিশুসন্তান শিহাবও এসেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিঙ্গাইর পৌর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদের ছেলে লালন ঢাকার একটি ছাপাখানায় চাকরি করতেন। করোনা সংকটে কাজ না থাকায় এলাকায় এসে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। প্রতিবেশী খন্দকার উজ্জ্বল হোসেন (৩৭) পৌর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবার ব্যবসা করে আসছেন। প্রায় দুই মাস আগে মাদক ব্যবসায়ী উজ্জ্বলের দুই হাজার ইয়াবা বড়ি খোয়া যায়। এ ঘটনায় লালনকে সন্দেহ করেন উজ্জ্বল। গত ২৬ জুন সকালে স্থানীয় ঘোনাপাড়া এলাকা থেকে একটি প্রাইভেটকারে করে উজ্জ্বল ও তাঁর সহযোগীরা লালনকে অপহরণ করে নিয়ে যান। পরের দিন সিঙ্গাইরের খৈয়ামুড়ি এলাকায় একটি পাটখেতে লালনের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ওই দিন নিহত লালনের স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে উজ্জ্বল এবং তাঁর সহযোগী খন্দকার অনিক, করম আলী, মো. ফাহিমসহ ছয়জনের নাম এবং অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

নিহত লালনের ভাই হালিম দেওয়ান বলেন, অপহরণের বিষয়টি জানার পরপরই তাঁরা থানায় যান। এ সময় দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুনকে বিষয়টি জানালে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, উজ্জ্বলের সঙ্গে এসআই মামুনের সখ্য ছিল। তাঁর ধারণা, মাদক ব্যবসার জন্য উজ্জ্বলের কাছ থেকে এসআই মামুন আর্থিক সুবিধা নিতেন।

সিঙ্গাইর থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে থানায় ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেই মামলা আছে আটটি। বাকি দুটির মধ্যে একটি হত্যা, অপরটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়। নয়টি মামলায় উজ্জ্বল জামিনে বের হন। লালন হত্যাকাণ্ডের পর সর্বশেষ গত ২৭ জুন তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ ও হত্যার মামলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লালনের স্ত্রী মমতাজ বেগম ও ভাই হাবিবুর রহমান জানান, এক মাস পেরিয়ে গেলেও মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মামলা তুলে নিতে উজ্জ্বল ও তাঁর লোকজন চাপ এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ নিয়ে তাঁরা শঙ্কার মধ্যে আছেন। দ্রুত মূল আসামিসহ বাকিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।

এসআই মামুন বর্তমানে জেলার দৌলতপুর থানায় কর্মরত। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি লালনের স্বজনেরা। তারপরও তাঁদের আইনি সহযোগিতার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে উজ্জ্বলের সঙ্গে তাঁর সখ্য ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়ে এসআই মামুন বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিঙ্গাইর থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, এই মামলায় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। মূল আসামিসহ অন্যদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।