নুরুলের দোতারায় সুর আছে, শ্রোতা নেই

দোতারা হাতে পথের গায়ক নুরুল ইসলাম। করোনাভাইরাসের কারণে রোজগার নেই তাঁর। গতকাল শুক্রবার রাজশাহীর বাগমারা নীচা বাজার এলাকা থেকে ছবিটি তোলা। ছবি: প্রথম আলো
দোতারা হাতে পথের গায়ক নুরুল ইসলাম। করোনাভাইরাসের কারণে রোজগার নেই তাঁর। গতকাল শুক্রবার রাজশাহীর বাগমারা নীচা বাজার এলাকা থেকে ছবিটি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

দোতারায় সুর তোলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঘিরে ভিড় জমে যেত। গান শুনে মুগ্ধ শ্রোতারা যাঁর যাঁর মতো করে অর্থ দিতেন। এ অর্থেই চলত পথের গায়ক নুরুল ইসলামের (৫২) জীবন। আধভাঙা সাইকেলটি চালিয়ে দোতারা নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়াতেন পথে পথে। চায়ের দোকানের আড্ডা দেখে নেমে পড়তেন। গানের নেশাই বহুকাল ধরে তাঁর পেশা।

নুরুল ইসলামের একমাত্র উপার্জনের পথটিতে থাবা বসিয়েছে করোনাভাইরাস। তাঁর শ্রোতা ছিনিয়ে নিয়েছে। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে বহু কষ্টে চলছে সংসার। ছোট ছেলের ওষুধের টাকা জোগাড় করতে ও জীবন চালাতে সেই আধভাঙা বাইসাইকেল ও দোতারা নিয়ে ঘরের বাইরে এলেও উপার্জন নেই। নুরুল ইসলামের জমিজমাও নেই। গান গেয়ে রোজগার করা ছাড়া আর কোনো কাজ জানা নেই তাঁর।

রাজশাহীর বাগমারার সীমান্তবর্তী এলাকা কালুপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে বাগমারা এলাকায় দোতারা বাজিয়ে গান গেয়ে টাকা উপার্জন করে আসছেন তিনি। বাইসাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। পথে পথে গান গেয়ে থাকেন। যেখানে লোকজনের আড্ডা জমে, সেখানে তিনি গান শুনিয়ে রোজগার করেন। এতেই কোনোরকম চলে তাঁর সংসার।

তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নুরুল ইসলাম বেকার হয়ে পড়েছেন। উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজনের আড্ডা না থাকায় গানের মজমা বসাতে পারেন না। কাঁধে দোতারা ঝুলিয়ে বাইসাইকেল নিয়ে উপজেলায় চষে বেড়ালেও শ্রোতা পাচ্ছেন না।

নুরুল ইসলাম জানান, তাঁর ছোট ছেলেটা অসুস্থ। ওষুধের টাকা জোগাড় করতে ও সংসার চালাতে দোতারা নিয়ে বের হলেও গানের মজমা বসাতে পারছেন না। কারণ ভিড় নেই। দোতারার সুর থাকলেও নেই শ্রোতা। অন্য পেশায় অভিজ্ঞতা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন করোনাকালে।

গতকাল শুক্রবার বাগমারা নীচা বাজারে নুরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা। বড় পাকৈড়গাছতলায় দোতারা গলায় ঝুলিয়ে মলিন মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছু সময় পর দোতারায় সুর তোলেন। কিন্তু সেভাবে কোনো শ্রোতা আসেননি। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। কাছে আসেননি। গান শেষে তিনি আকুতি জানালে কেউ কেউ সামান্য কিছু টাকা দিয়ে যান।

এই প্রতিবেদককে নুরুল ইসলাম বলেন, এখন রোজগার নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সংগীতের সঙ্গে জড়িত। তাই সংগীতকেই বুকে লালন করে জীবিকার পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এতে মানুষকে বিনোদন দেওয়া ছাড়াও সংসার চালানো যায়। লকডাউন শিথিল হলেও লোকজন আর আগের মতো জমায়েত করে আড্ডা দিচ্ছেন না। তাই তাঁর গানের শ্রোতাও নেই, রোজগারও নেই।

নুরুল ইসলাম জানান, করোনাকালে সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি। সামাজিকভাবে কয়েকজন কিছু সহযোগিতা করেছেন।

নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, নুরুল ইসলামের আনাগোনা তাঁর ইউনিয়ন এলাকাসহ গোটা বাগমারা হলেও তিনি সীমান্তবর্তী মান্দা উপজেলার বাসিন্দা। তাই তিনি সরকারিভাবে কিছু করতে পারেননি।

বাগমারা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হালিমুজ্জামান বলেন, নুরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে পথে পথে গান গেয়ে চলেছেন। লকডাউনের সময় তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। কয়েক দিন আগে তাঁকে দোতারা নিয়ে বাগমারা বাজারে দেখা গেছে। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে তিনি দোতারা নিয়ে বের হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।