ভারতে আটকে পড়া তাবলিগ সদস্যরা দেশে ফিরছেন

ভারতের রাজধানী দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকার তাবলিগ জামাতের মারকাজসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানের সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন আড়াই শর বেশি বাংলাদেশি। তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের এসব সদস্যরা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। এদের মধ্যে গত শুক্রবার রাতে ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে সড়ক পথে ১৪ জন বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে পৌঁছেছেন। দ্বিতীয় দলে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের ১৭ সদস্য শনিবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে ট্রেনে যাত্রা করে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে কাল রোববার সন্ধ্যা নাগাদ সড়কপথে বেনাপোল সীমান্তে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের অন্তত ৫০ জন সদস্যের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

দ্য হিন্দু ও ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১ থেকে ১৫ মার্চ দিল্লির নিজামউদ্দিনে তাবলিগ জামাতের সমাবেশ হয়। এতে অংশ নেওয়া ছয়জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তেলেঙ্গানায়। এতে করে নিজামুদ্দিন এলাকার তাবলিগ জামাতের মারকাজ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কথা বলা হয়। ভারত সরকার তাবলিগের সমাবেশে অংশ নেওয়া ৯৬০ জন বিদেশিকে কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের ভিসা বাতিল করে। এদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ৩৭৯ জন, বাংলাদেশের ১১০ জন, কিরগিজস্তানের ৭৭ জন, মালয়েশিয়ার ৭৫ জন, থাইল্যান্ডের ৬৫ জন, মিয়ানমারের ৬৩ জন, শ্রীলঙ্কার ৩৩ জন, ভিয়েতনামের ১২ জন, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের ৯ জন করে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪ জন ও ফ্রান্সের ৩ জন নাগরিক রয়েছেন।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়া বিদেশিরা এখন কোথায় অবস্থান করছেন সেটা খুঁজে বের করতে দিল্লি পুলিশ ও অন্য রাজ্যের পুলিশ প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে। এরপর ওই বিদেশিদের বিরুদ্ধ ফরেনার্স অ্যাক্ট ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এরপর দিল্লির পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলোতে বিদেশি তাবলিগ জামাত সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়। পরে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ ৪০ টি দেশের আড়াই হাজার তাবলিগ জামাত সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) পাঠানো হয়। পরে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হয়।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু ভারত সরকার ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিদেশি তাবলিগ জামাত সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাই আদালতের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথমে বিষয়টির সুরাহা করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের সামনে দুটি বিকল্প ছিল। তাদের বলতে হবে তাঁরা দোষী কিংবা তাদের বলতে হবে ওই আইনের অভিযোগে তাঁরা আটক ছিলেন। পরে দুই থেকে ১০ হাজার রুপি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রায় আর্থিক জরিমানা শেষে তাদের মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হয়েছে।

জানা গেছে, দিল্লিতে ৯২ জন এবং উত্তর প্রদেশে, হরিয়ানা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ১১ টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল মিলে বাংলাদেশ তাবলিগ জামাতের আরও ১৭৩ জন সদস্য করোনাভাইরাসের সময় ভারতে অবস্থান করছিলেন। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত থেকে অভিযোগ নিষ্পত্তির মূল কপি পুলিশের কাছে পাঠানো, তাদের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল, ভারত ত্যাগের অনুমতিপত্র সংগ্রহসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়।

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের প্রক্রিয়া শেষে পুলিশসহ সরকারি দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা ও ছাড়পত্র সংগ্রহসহ তাবলিগ জামাত সদস্যদের মিশন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে। গত চার মাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে আছেন। তাই আদালতের প্রক্রিয়া শেষে তাদের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে মিশন বাকি কাজগুলোতে তাদের সহযোগিতা করছে।