টাঙ্গাইলে বন্যার্তদের জন্য পৌর কাউন্সিলরের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা

টাঙ্গাইলে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেড় শতাধিক মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো
টাঙ্গাইলে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেড় শতাধিক মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছেন এক পৌর কাউন্সিলর। সেখানে ৪০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পরিবারগুলোর দেড় শতাধিক সদস্য নিরাপদে থাকার পাশাপাশি তিন বেলা খাবারও পাচ্ছেন। এ উদ্যোগ প্রশংসা পেয়েছে স্থানীয় মানুষের।

আশ্রয়কেন্দ্র খোলার উদ্যোগ নেওয়া ওই কাউন্সিলরের নাম আমিনুর রহমান। তিনি টাঙ্গাইল পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তিনি বলেন, তাঁর নিজের ওয়ার্ড এবং পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের কিছু এলাকায় এক মাস আগে বন্যার পানি ঢোকে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েন বন্যার্তরা। সরকারিভাবে পৌর এলাকায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়নি। তাই তিনি নিজেই উদ্যোগ নেন। বাজিতপুর আদি টাঙ্গাইল উচ্চবিদ্যালয়ে চালু করেন আশ্রয়কেন্দ্র। এক মাস আগে এই স্কুলের একটি তিনতলা, একটি একতলা ও একটি টিনশেড ঘরে ৪০টি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করেন। আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন তিনি।

গতকাল শনিবার বিকেলে আদি টাঙ্গাইল উচ্চবিদ্যালয়ের ওই আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলাবিশিষ্ট শান্তিলতা ভবন, একতলা ভবন ও টিনশেড বারান্দায় চলছে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের আড্ডা। ছেলেমেয়েরা মাঠে খেলাধুলা করছে। মাঠের উত্তর দিকে তৈরি করা হয়েছে রান্নাঘর। সেখানে চলছে রাতের খাবার তৈরির কাজ। মাছ কাটার কাজ করছিলেন হাসি বেগম নামের একজন। তিনি বলেন, এক মাস আগে স্বামী-সন্তান নিয়ে এই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর তাঁদের তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেন। তিনি চাল, ডাল, মাছ, সবজিসহ সব পাঠান। আশ্রয় নেওয়া লোকজন নিজেরা মিলেমিশে রান্না করেন। রান্না শেষে প্রত্যেক পরিবারের লোক রান্নাঘর থেকে তাঁদের পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন তিন বেলা ভাত এবং ভাতের সঙ্গে ডাল, ভর্তা ও সবজি নিয়মিত থাকে। পাশাপাশি কোনো দিন মাছ, কোনো দিন মাংস, আবার কোনো দিন ডিম দেওয়া হয়।

বাজিতপুরের মোশারফ হোসেন বলেন, বাড়িতে পানি ওঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। এখানে খাওয়াদাওয়ার কোনো চিন্তা করতে হচ্ছে না। কালাম মিয়া নামের একজন বলেন, আদি টাঙ্গাইল, বাজিতপুর, সুখনগর, বেড়াবুচনা ও ঘোনাপট্টির বন্যাকবলিত ব্যক্তিরা এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের এলাকায় বন্যার পানি কমেছে, কিন্তু জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বাড়ি ফিরতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ লাগবে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে কয়েক মাস ধরে আয়রোজগার নেই। বসে খেতে খেতে সঞ্চয়ও শেষ হয়েছে। বন্যায় এই সহায়তা না পেলে খুব সমস্যায় পড়তে হতো তাঁদের।

কাউন্সিলর আমিনুর রহমান বলেন, ভোটের আশায় নয়, বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্য তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এখানে শুধু তাঁর ওয়ার্ড নয়, অন্য ওয়ার্ডের লোকজনদেরও থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজন আমার অতিথি। আমি নিজে বাড়িতে যা খাই, তাঁদের জন্যও সেই মানের খাবারের ব্যবস্থা করি।’

সরকারি এমএম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল হুদা বলেন, ‘এটি ভালো উদ্যোগ। আমাদের দেশের জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবান মানুষেরা এগিয়ে এলে যেকোনো দুর্যোগে পড়া মানুষের দুর্ভোগ কমবে।’