দৌলতদিয়া ঘাট, যাত্রীদের থুতনি-ব্যাগে-পকেটে মাস্ক

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপারে যাত্রীদের অনেকেই মাস্ক পরেননি। গতকাল শনিবার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপারে যাত্রীদের অনেকেই মাস্ক পরেননি। গতকাল শনিবার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

ঈদের আগে–পরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপারে ভিড় লেগেই আছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অধিকাংশ যাত্রীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ঘাটতি দেখা গেছে। বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক ছিল না। কারও মুখে থাকলেও তার ব্যবহার সঠিক ছিল না। অনেকে থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। কারও মাস্ক ছিল পকেটে–ব্যাগে।
এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আগত মানুষ নদী পাড়ি দিতে দৌলতদিয়ায় ফেরির জন্য অপেক্ষা করছেন। যাত্রীদের ভিড়ে কখনো কখনো প্রতিটি ফেরিঘাটের পন্টুনে দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। লঞ্চঘাটেও মানুষের একই ধরনের চিত্র দেখা যায়। একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
®গতকাল শনিবার যশোর থেকে লঞ্চ পারাপার বাসে করে গাজীপুর যাওয়ার উদ্দেশে দুপুরের দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে নামেন আলামিন ও সাদ্দাম হোসেন নামের দুই বন্ধু। তাঁদের দুই বন্ধুর মুখেই মাস্ক ছিল না। কিছুটা দূর থেকে ছবি তোলার সময় তাঁরা হেসে মুখ আড়াল করার চেষ্টা করেন।
জানতে চাইলে দুই বন্ধু বলেন, ‘মাস্ক পকেটে রয়েছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে মুখে লাগাইনি। ঘাট থেকে এক কিলোমিটার আগে বাস থেকে আমাদের নামিয়ে দেওয়া হয়। পুরো পথ হেঁটে ঘাটে আসতে হচ্ছে। গরমের মধ্যে মুখে মাস্ক পরে হাঁটার সময় দম বন্ধ লাগে।’
মাগুরা থেকে আসা বাসযাত্রী রেশমা সুলতানা ও তাঁর ভাই রাকিবুল হক সাভারের নবীনগর যাচ্ছিলেন। আগের দিন রেশমার স্বামী নবীনগর চলে গেলেও বাড়ির অন্যান্য কাজ সেরে পরদিন ভাইকে সঙ্গে করে নবীনগর রওনা হন রেশমা সুলতানা। তাঁদের সঙ্গে ছোট্ট শিশুও রয়েছে। পরিবারটির কারও মুখেই মাস্ক ছিল না।
রেশমা বলেন, ‘করোনা যার হওয়ার তো হবেই। আমি-আপনি কেউ ঠেকাতে পারব না। তাই করোনা নিয়ে এখন আর ভয় পাই না। মাস্ক ব্যাগের পকেটে আছে। বাসে উঠে মুখে দেব। এখন গরমের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছি, তাই মাস্ক পরছি না।’
লঞ্চঘাটের চিত্রও একই রকম। যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে লঞ্চঘাটে প্রবেশের কাঠের সেতুতে এক পাশে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জীবাণুনাশক টানেল স্প্রে যন্ত্র বসিয়েছে। মানুষের ভিড়ের কারণে কারও টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় নেই। যে যাঁর মতো দ্রুত লঞ্চ ধরতে পন্টুনে ওঠার চেষ্টা করছেন। পন্টুনের ওপর এক পাশে পানিভর্তি বড় ড্রামের জার ও সাবান রাখা হয়েছে হাত ধোয়ার জন্য। হাত ধোয়ার কারও সময় নেই। একজন আরেকজনকে ধাক্কা মেরে ভিড় ঠেলে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করছেন।
কুষ্টিয়া থেকে আসা লঞ্চের যাত্রী ফরহাদ মুন্সী টানেলের ভেতর দিয়ে না এসে, হাত না ধুয়ে লঞ্চে ওঠার সময় বলেন, ‘ভাই, এখন এসব করার সময় কই? দেখছেন না কে কার আগে লঞ্চে উঠবে, এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ ছাড়া টানেল তো বন্ধ দেখলাম। কেউ তো গেল না, আমিও যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।’
বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের সতর্ক করে মাইকিং করছি। ঈদ শেষে কর্মমুখী মানুয়ের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রী সচেতন না হওয়ায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ বলেন, সচেতনতার অভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। গোয়ালন্দ উপজেলায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ দৌলতদিয়া ঘাট। প্রতিদিন ঘাট দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পারাপার হয়। কে সুস্থ, কে অসুস্থ বোঝার উপায় নেই।
আসিফ মাহমুদ বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করা হলেও কেউ ভ্রুক্ষেপ করছেন না। এ কারণে গোয়ালন্দে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ কোভি–১৯–এ আক্রান্ত হচ্ছেন।
ঘাট এলাকায় কর্তব্যরত ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আমরা ঘাট দিয়ে পারাপারের সময় যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করছি। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়ছে।