'ঘুষের টাকায়' একের পর এক জমি

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন রফিকুল ইসলাম। সোমবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন রফিকুল ইসলাম। সোমবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে। ছবি: প্রথম আলো

বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার হিসাবরক্ষক বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বেলায়েত ঘুষের টাকায় একের পর এক জমি কিনে চলেছেন। এর আগে ওই ব্যক্তি একই বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

বেলায়েত হোসেন (৩৯) পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের জালিয়াঘাটা গ্রামের সেলিম তালুকদারের ছেলে। জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মঞ্জুরুল আলম পাহলান প্রথম আলোকে বলেন, বেলায়েত হোসেন অত টাকাপয়সার মালিক নন। কিন্তু তিনি কাকচিড়া ইউনিয়নে বেশ কিছু জমি কিনেছেন। টাকার উৎস যে আয়বহির্ভূত, তা সবারই জানা।

তবে ঘুষের টাকায় জমি কেনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাথরঘাটা পৌরসভার হিসাবরক্ষক বেলায়েত হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কত জমি কিনেছি তা আমার মনে নেই। তবে ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’

সোমবার বেলা ১১টার দিকে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান পাথরঘাটা পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেলায়েত হোসেন হিসাবরক্ষক হিসেবে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাথরঘাটা পৌরসভায় যোগদান করেন। এর চার বছর পর ২০১১ সালে তিনি তিনটি দলিলে জমি কেনেন। এরপর থেকে জমি কিনেই চলেছেন। ২০১২ সালে তিনি ৫টি, ২০১৩ সালে ২টি, ২০১৪ সালে ২টি, ২০১৫ সালে ৪টি, ২০১৬ সালে ৪টি, ২০১৮ সালে ৯টি, ২০১৯ সালে ৯টি ও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ২টি দলিলে জমি কিনেছেন। পাথরঘাটা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে এসব জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। গত ১০ বছরে বেলায়েত হোসেন নিজ নামে, স্ত্রী সুরাইয়া সুলতানা, ছেলে আবদুল্লাহ আল নোমান ও শ্বশুর সেলিম সিকদারের নামে সব মিলিয়ে ৪৩টি দলিলে ৬৫০ শতক জমি কিনেছেন। দলিলে উল্লিখিত অঙ্ক অনুযায়ীই এসব জমির দাম আড়াই কোটি টাকার বেশি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মামুন সিকদার। তিনি বলেন, ১০ বছরে বেলায়েত হোসেন ও তাঁর স্বজনদের নামে অন্তত ৪৩টি দলিলে ৬৫০ শতক (সাড়ে ৬ একর) জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জমি রেজিস্ট্রির সময় ক্রেতার আয়ের উৎস দেখা হয় না। সাধারণত বিক্রেতার কাগজপত্র যাচাই করে জমির দলিল সম্পাদন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, পৌরসভার হিসাবরক্ষক বেলায়েত হোসেনের ঘুষের টাকার উৎস বহুমুখী। তিনি সাবেক কাউন্সিলরদের সম্মানী ভাতা অনুমোদন করাতে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজের বিল প্রস্তুতি করতে ৭ শতাংশ ঘুষ নেওয়া, ঠিকাদারদের সঙ্গে নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি, পৌরসভার সব বিল ভাউচার তৈরির ক্ষেত্রে ২০-৩০ শতাংশ ঘুষ নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হিসাবরক্ষক বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। যাঁদের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরাও কেউ আমার কাছে জানতে চাননি।’

রফিকুল ইসলাম এর আগেও পৌরসভার হিসাবরক্ষক বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।