বিশ্বনাথে সাংসদ মোকাব্বিরের গাড়িতে আ.লীগ নেতার ঢিল

সাংসদ মোকাব্বির খান এই গাড়িতে করে উপজেলা পরিষদে যান। আশপাশে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও গাড়িতে ঢিল ছোড়া হয়। সোমবার দুপুরে ঘটনার ঠিক আগমুহূর্তে। ছবি: সংগৃহীত
সাংসদ মোকাব্বির খান এই গাড়িতে করে উপজেলা পরিষদে যান। আশপাশে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও গাড়িতে ঢিল ছোড়া হয়। সোমবার দুপুরে ঘটনার ঠিক আগমুহূর্তে। ছবি: সংগৃহীত

গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের সাংসদ মোকাব্বির খানের গাড়িতে ঢিল ছুড়ে আওয়ামী লীগের দুই নেতা হামলার চেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার দুপুরের দিকে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সামনে সাংসদের গাড়িতে ঢিল ছোড়া হয়।

স্থানীয় সাংসদ হিসেবে মোকাবিব্বর খান উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় যোগ দিতে বিশ্বনাথ গিয়েছিলেন। এ ঘটনার পর সভায় যোগ দিয়ে তিনি ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সাংসদ মোকাব্বির খান ওসমানীনগর থেকে তাঁর গাড়ি দিয়ে বিশ্বনাথ যান। উপজেলা ফটকের সামনে তখন পুলিশ মোতায়েন ছিল। ফটকের সামনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়াকে ঘিরে তাঁর অনুসারী নেতা–কর্মীরা ছিলেন। সাংসদের গাড়ি যখন ফটক অতিক্রম করে উপজেলা পরিষদে ঢুকছিল, তখন শোরগোল দেখা দেয়। কিছু নেতা–কর্মী ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দেন। এ সময় হঠাৎ সাংসদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটের টুকরা দিয়ে দুজন দুটি ঢিল ছোড়েন। একটি ঢিল গাড়ির সামনে লেগে গ্লাস ভেঙে যায়। এরপর সাংসদের গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে উপজেলা পরিষদের ভেতর ঢোকে।

পরে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বর্ণালী পালের সভাপতিত্বে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও মাসিক সমন্বয় সভায় সাংসদ মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদে না যাওয়ার জন্য অনেক হুমকি এসেছিল। জনগণের সেবা করার জন্য এলাকাবাসী আমাকে ভোটে নির্বাচিত করেছেন। তখনই তো আমার জীবনের মায়া ছেড়ে আমি সংসদে গিয়েছি। আর এখন আমার ওপর সন্ত্রাসী হামলা হবে, তা-ও আবার এই আগস্ট মাসে, সেটা আমি কখনো ভাবিনি, এই নিয়ে ভয়ও করি না।’

সভা শেষে সাংসদ মোকাব্বির খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়িতে ঢিল ছোড়ার পর আমি সেখানে কিছু বলিনি। কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়েছি যে যখন দুজন লোক ঢিল ছুড়ছিল, পুলিশ পাশেই ছিল। কোনো প্রটেকশন বা সন্ত্রাসীদের ধরতে পদক্ষেপ নেয়নি।’ শামীম ও সিরাজ নামের দুজন লোককে ঢিল ছুড়তে দেখেছেন উল্লেখ করে সাংসদ জানান, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিতি আওয়ামী লীগ নেতা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সবাই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে বলেছেন বলে তিনি জানান।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সাংসদের গাড়িতে ঢিল ছুড়েছেন বলে যে দুজনের নাম এসেছে, তাঁরা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিতি। এস এম নুনু মিয়া ও সাংসদের মধ্যে বিরোধ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। শামীম আহমদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ও সিরাজ উদ্দিন শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন। ঘটনার পর তাঁদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে দুজন ফোন রিসিভি করেননি।

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া বলেন, ‘এমপির সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। কে বা কারা এই অপ্রপচার করছে। আর এমপির গাড়িতে হামলা মোটেই শুভনীয় নয়। ঘটনাটি শুনে আমি নিজেই সভায় নিন্দা জানিয়েছি।’

বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ সেখানে ছিল বলে বড় রকমের কোনো অঘটন ঘটেনি। হামলার চেষ্টাকারীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে। পাশাপাশি সাংসদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ামাত্র মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করব।’