মহল্লার বাসিন্দারা যত্ন নেন পাখির

বাঁশগাছের আড়ালে অবাধে বিচরণ করছে বক ও পানকৌড়ি। কাজীপাড়া মহল্লা, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: সোয়েল রানা
বাঁশগাছের আড়ালে অবাধে বিচরণ করছে বক ও পানকৌড়ি। কাজীপাড়া মহল্লা, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: সোয়েল রানা

‘হামাকোরক পাখিগুলো দেখতে সুন্দর লাগে। হামরা এলা যত্ন করি রাখি। যারা মারতে আসে, তাদের বাধা দেই। হামরা মারি না, কাউকে মারতেও দেই না। দেশের এগলা অতিথি। বহুদিন থেকে আসে। হামার বিয়া হওয়াত থাকা দেখছি পাখিগুলা আসে, আবার শীত আলাই চলি যায়।’ এভাবেই পাখির প্রতি ভালোবাসার কথা জানাচ্ছিলেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌর এলাকার বাসিন্দা রেমি বেগম।

ক্ষেতলাল পৌরসভার ইটাখোলা থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে কাজীপাড়া মহল্লা। এখানে সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ পরিবারের বসবাস। মূলত এই মহল্লায় থাকেন কাজী ও দেওয়ান বংশের লোকজন। মহল্লাটি আশপাশের মানুষের কাছে পাখির গ্রাম হিসেবে পরিচিত। সোমবার মহল্লাটির পাকা সড়ক দিয়ে যেতেই কানে ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। চোখে পড়ে সড়কের সঙ্গে বিশাল বাঁশঝাড়। একটু দূরে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ বাঁশঝাড়ে ধবধবে সাদা বক যেন জ্বলছে।

বাঁশঝাড়ে সাদা বক। কাজীপাড়া, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
বাঁশঝাড়ে সাদা বক। কাজীপাড়া, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

মহল্লায় ঢুকতেই একটি বাড়ির বড় তেঁতুলগাছে শামুকখোল পাখি চোখে পড়ল। এই মহল্লার আম, জাম, কড়ই, কদম, বরইসহ বিভিন্ন গাছে দেখা মেলে হরেক প্রজাতির পাখি। কলকাকলিতে মুখর আশপাশ। কাজীপাড়া মহল্লার তরুণ আবদুল ওয়ারেছ ভূগোল বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেছেন। চাকরিপ্রার্থী এই তরুণ করোনা পরিস্থিতির কারণে নিজ এলাকায় থাকছেন। পাখির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে তাঁদের এলাকায় পাখির বাসা দেখে আসছেন। গ্রামের মুরব্বিদের কাছ থেকে জেনেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই এখানে অবাধে বাহারি পাখি বিচরণ করে আসছে। এখানে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখি এই গ্রামের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

গাছের প্রায় সব ডাল দখল করে বসে আছে পানকৌড়ি। কাজীপাড়া মহল্লা, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
গাছের প্রায় সব ডাল দখল করে বসে আছে পানকৌড়ি। কাজীপাড়া মহল্লা, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

‘হামি জন্ম থেকে দেখছি হামাকেরে গ্রামত পাখি থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। জাঠা বক, কানি বক, সোনা বক, শামুকখোল, পানকৌড়ি, ভেলা পাখি, রাতচরা পাখি ও মাছরাঙা পাখি,’ বলেন কাজীপাড়া মহল্লার বাসিন্দা রজব আলী দেওয়ান।

গাছের মগডালে খুনসুটিতে মেতেছে এক জোড়া শামুকখোল পাখি। কাজীপাড়া, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: সোয়েল রানা
গাছের মগডালে খুনসুটিতে মেতেছে এক জোড়া শামুকখোল পাখি। কাজীপাড়া, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: সোয়েল রানা

গ্রামে প্রায় ৪০ বছর আগে বউ হয়ে এসেছেন সোহাগী বেগম। তিনি বলেন, ‘এই দেশের পাখি হামরা মারবার দিব না। এগলা মারলে সরকার বাদী হবি। তোমরা আসছ, দেখি যাও। কিন্তু পাখিগুলো মারা হবি না। বাহিরের লোকেরা আসে পাখি মারতে, হামরা মারবার দেই না।’

বটগাছে বেশ কিছু বাদুড় ঝুলে আছে। কাজীপাড়া মহল্লা, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
বটগাছে বেশ কিছু বাদুড় ঝুলে আছে। কাজীপাড়া মহল্লা, ক্ষেতলাল পৌরসভা, জয়পুরহাট, ১০ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

ক্ষেতলাল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভার ছোট একটি মহল্লা কাজীপাড়া। জন্মের পর থেকেই তিনি এখানে পাখির অভয়ারণ্য দেখে আসছেন। মহল্লার লোকজনই পাখিগুলোকে দেখভাল করে থাকেন।