উটপাখিটির মৃত্যু, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ

অসুস্থ হয়ে উটপাখিটি মারা গেছে। বরল গ্রাম, লালমাই, কুমিল্লা। ছবি: সংগৃহীত
অসুস্থ হয়ে উটপাখিটি মারা গেছে। বরল গ্রাম, লালমাই, কুমিল্লা। ছবি: সংগৃহীত

উটপাখিটির উচ্চতা ছিল ৭ ফুট ২ ইঞ্চি। ওজন অন্তত ১২০ কেজি। বয়স ৩২ মাস। আশপাশের মানুষ প্রতিদিন উটপাখিটি দেখতে আসত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উটটির শরীর প্রচণ্ড খারাপ হয়। এটাকে চিকিৎসাসেবা দিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে ফোনও করা হয়। কিন্তু সাপ্তাহিক ছুটি ও ব্যস্ততার কথা বলে ওই কর্মকর্তা উটপাখির সেবা দিতে যাননি। পরে রোববার দুপুরে পাশের উপজেলার এক পশু চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পথে উটপাখিটি মারা যায়। এ ঘটনা কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের বরল গ্রামের।

মৃত উটপাখিটির বাজারমূল্য ছিল ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এটির মৃত্যুতে খামারমালিক আহসান উল্লাহ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁর অভিযোগ, লালমাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে উটপাখির চিকিৎসার জন্য ফোন করা হলেও তিনি কোনো ধরনের সাড়া দেননি।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের মে মাসে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার সাতরা এলাকার রিয়াজ উদ্দিনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা জোড়া দরে তিন জোড়া উটপাখির বাচ্চা শখের বশে কেনেন লালমাই উপজেলার বরল গ্রামের আহসান উল্লাহ। এক বছরের মধ্যে দুই জোড়া উটপাখি মারা যায়। বেঁচে থাকা উটপাখি দুটি ধীরে ধীরে বড় হয়। একপর্যায়ে মেয়ে উটপাখিটি ডিম পাড়ার উপযুক্ত হয়। কিন্তু হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে উটপাখিটির শরীরে জ্বর অনুভূত হয়। একই সঙ্গে সে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। খামারমালিক আহসান উল্লাহ উটপাখিটির চিকিৎসার জন্য স্থানীয় লালমাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। তবে তিনি ব্যস্ততা ও সাপ্তাহিক ছুটির কথা বলে পাখিটিকে দেখতে আসেননি। শেষ পর্যন্ত পাখিটি চরম অসুস্থ ও শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে রোববার দুপুরে মারা যায়। এ ঘটনায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধের চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ এনেছেন আহসান উল্লাহ।

আহসান উল্লাহর ভাষ্য, ইউটিউবে উটপাখি পালনের দৃশ্য দেখে তিনি তা পুষতে উৎসাহী হন। এরপর নিজ বাড়িতে তিন জোড়া উটপাখি দিয়ে খামার শুরু করেন। সফল হলে বড় খামার করা পরিকল্পনা ছিল তাঁর। বর্তমানে তিনি পুঁজি হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন,‘প্রতিদিন আমি ও আমার মা উটপাখিকে কলমিশাক খাওয়াতাম। ঈদের সময় এটির দাম ওঠে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আমি বিক্রি করিনি। ভেবেছিলাম, কয়েক দিন বাদে ডিম পাড়বে, বাচ্চা দেবে। এখন আমার পুঁজি, পরিশ্রম ও খামার করার পরিকল্পনা—সবই গেল। পাখিটির জন্য ভীষণ মায়া লাগছে।’

অভিযোগের বিষয়ে লালমাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘উটপাখির মালিক আমাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সাপ্তাহিক বন্ধ এবং সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারিনি। তবে পাশের উপজেলা থেকে ডাক্তার পাঠিয়েছিলাম। ততক্ষণে সেটি মারা গেছে।’