'করোনার মইদ্দে বন্যা, আর তো পারি না'

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ পেয়ে বাড়ি ফিরছেন তাঁরা। গতকাল মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ি গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ পেয়ে বাড়ি ফিরছেন তাঁরা। গতকাল মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনি মিলিয়ে বিরাট সংসার আবদুল আজিজের (৬৫)। ছেলে শামীম হোসেন সংসারের উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তি। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারে একটি খাবারের হোটেলে ব্যবস্থাপকের কাজ করেন শামীম। করোনসংকট এবং বন্যা পরিস্থিতিতে হোটেলে বেচা-বিক্রি বন্ধ। পরিবারটির এখন না খেয়ে থাকার দশা।

আবদুল আজিজের বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ি গ্রামে। গতকাল তিনি এসেছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ নিতে। ত্রাণসহায়তা পেয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার মইদ্দে কত্ত দিন ধইরা বন্যা, আর তো পারি না। ছেলেডার কামাইরোজগার বন্ধ। ঘরে চাইল-ডাইলেরও অভাব। বিপদে পিঁপড়ার বলও বল। এই তেরানে চার-পাঁচ দিন খাওনের ব্যবস্থা অইবো।’

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মাপাড়ের ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতেই এখন নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ বছর বন্যায় পুরো হরিরামপুর উপজেলাই প্লাবিত হয়েছে। উঁচু এলাকাগুলো থেকে পানি কমলেও চর এবং নিচু এলাকার অনেক বসতবাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি। দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় উপজেলার মানুষজনের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দরিদ্র অনেক পরিবারে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ি ও পশ্চিম কৌড়ি গ্রাম দুটির পানিবন্দী ১০০টি পরিবারকে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়। কৌড়ি পাকা সড়কে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বন্যার্ত ৭০টি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়। এরপর বন্ধুসভার বন্ধুরা নৌকায় করে ৩০টি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছে দেন। ত্রাণসহায়তার প্যাকেটে ছিল চাল, ডাল, আলু ও লবণ। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন কৌড়ি গ্রামের ‘বৃক্ষপ্রেমী’ শাজাহান বিশ্বাস, নারী ইউপি সদস্য রুবিয়া বেগম, মানিকগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি মাহবুব আলম, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

বন্যায় খেতখামার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর নৌকা চালানো শুরু করেন কৃষিশ্রমিক লিয়াকত আলী (৬০)। তিনি বলেন, ‘গেরামের মানুষজন নৌকাত পার কইয়্যা কয়েক দিন ট্যাহা-পয়সা পাইছি। পানি কমছে, রাস্তাঘাট জাগছে, নৌকায় এহন আর আয় হয় না। খেতখামারেও পানি নামে না, কামও শুরু হয় না।’

ত্রাণ পেয়ে কৌড়ি গ্রামের রিকশাচালক বৃদ্ধ চান মিয়ার স্ত্রী সামছুন্নাহার বেগম (৫৫) বলেন, ‘এহন আর বাড়িওয়ালা (স্বামী) ঠিক মতোন রিকশা চালাইবার পারে না। বয়স অইয়্যা গেছে। পোলাপানের আলাদা সংসার। তাগোর সংসারই চলে না। আপনাগো তেরানে বুইড়্যা-বুড়ি কয় দিন তো খাইতে পারুম।’