সুন্দর দৃশ্যের ফুটেজ নেয় দলটি

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান, শিপ্রা রানী দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূর।
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান, শিপ্রা রানী দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূর।

ওই রাতে রিসোর্টে ছিলেন কেবল তাহসিন রিফাত নূর ও শিপ্রা দেবনাথ। রাতে পুলিশ এসে তাঁদের জানায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর পুলিশ তাঁদের কক্ষ তল্লাশি করে তথ্যচিত্রের জন্য ধারণ করা ভিডিও ফুটেজের তিনটি হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। তাঁরা ভ্রমণবিষয়ক তথ্যচিত্রের জন্য কেবলই সুন্দর দৃশ্যের ফুটেজ নিচ্ছিলেন। পাহাড়ের অপরাধ বা জনজীবন তাঁদের বিষয় ছিল না।

তাহসিন রিফাত জানান, ভ্রমণবিষয়ক একটি তথ্যচিত্র প্রকল্পের ভিডিও সম্পাদনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। ওই প্রকল্পের প্রধান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান গত ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ঘটনার দিন গভীর রাতে প্রজেক্টের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিনকে রিসোর্ট থেকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। পরে শিপ্রাকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। তবে তাহসিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার মেজর (অব.) সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গতকাল জামিন পান সিফাত।

তাহসিনের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী গ্রামে। গতকাল সোমবার দুপুরে মোবাইল ফোনে তাহসিনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। সিফাত, শিপ্রা ও তাহসিন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।

তাহসিন বলেন, ওই রাতে তিনি আর শিপ্রা ছাড়া রিসোর্টে আর কেউ ছিলেন না। রাতে তাঁরা চিন্তিত ছিলেন এবং জেগে ছিলেন। রাত ১২টার দিকে ২০–২৫ জন পুলিশ রিসোর্টে আসে। পুলিশ তাঁদের জানায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সেটা কী, পুলিশ কিছুই বলে না। এই মুহূর্তে সিনহা ও সিফাতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁরা পারেননি। ওঁদের ফোন বাজছিল, কিন্তু কেউ ধরছিল না।

তাহসিন বলেন, পুলিশ জানতে চায়, এখানে কারা থাকে, কী করে। এরপর ঘর তল্লাশি করতে থাকে পুলিশ। তাহসিনের ঘরে তথ্যচিত্রের যাবতীয় ভিডিও তিনটা হার্ডড্রাইভে ছিল। সেগুলো পুলিশ নিয়ে নেয়। তাঁর ঘর থেকে আর কিছু নেয়নি। তবে শিপ্রার কক্ষে কী হয়েছিল, সেটা জানা নেই তাহসিনের।

তাহসিন জানান, রাত তিনটার দিকে পুলিশ একপর্যায়ে তাঁদের থানায় নেওয়ার জন্য বলে। তবে এর মধ্যে পুলিশ কখনোই বলেনি, মেজর (অব.) সিনহা মারা গেছেন। সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর একজন আসেন। তিনিই জানান, সিনহা মারা গেছেন। এরপর তাঁদের দুজনকে রামুতে নেওয়া হয়।

তাহসিন জানান, ইউটিউবে প্রচারের জন্য তাঁরা ভ্রমণবিষয়ক ভিডিও বানাচ্ছিলেন। একেকটা ভিডিও একেকটা জায়গায় ধারণ করা হতো। তাহসিনের ভাষ্যমতে, ৩ জুলাই তিনি কক্সবাজারে যান। সেখানে যাবার ১০–১৫ দিন আগে শিপ্রা ও সিফাতের মাধ্যমে সিনহার সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁর কাজ ছিল সারা দিন যা ফুটেজ আনা হতো সেটা সম্পাদনা করা।