করোনা রোগীদের ২৫% অন্য রোগেও আক্রান্ত

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে যাঁরা একই সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো অন্যান্য রোগে আক্রান্ত, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। দেশে করোনায় আক্রান্ত লোকজনের একটি অংশ এ ধরনের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় টেলিফোনে চিকিৎসা নেওয়া করোনা রোগীদের চারজনের একজন করোনার পাশাপাশি অন্য রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে এই তথ্য জানানো হয়। বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, রোববার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৩৭৩ জন করোনা রোগীকে টেলিফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই রোগীদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৪২ শতাংশের লক্ষণ-উপসর্গ অল্প ঝুঁকিপূর্ণ। আর অতি ঝুঁকিপূর্ণ রোগী ছিল ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তিনি জানান, এই ৪ হাজার ৩৭৩ জনের মধ্যে ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, হৃদ্‌রোগ, কিডনিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। আর ৭৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ শুধু করোনায় আক্রান্ত ছিল।

যাঁরা বিভিন্ন অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত তাঁদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। জটিলতা বেড়ে যায়। তাই যাঁরা এ ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত, তাঁদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে সেটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। চীনে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের একটি যৌথ মিশন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, চীনে আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে ৮০ শতাংশের উপসর্গ ছিল মৃদু। তবে ষাটোর্ধ্ব এবং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ক্যানসারে আক্রান্ত লোকজনের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। শুধু করোনায় আক্রান্ত এমন লোকজনের ক্ষেত্রে চীনে মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে করোনার পাশাপাশি অন্য রোগে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর হার ছিল অনেক বেশি।

যৌথ মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর হার ছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ২ শতাংশ, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের রোগীদের ক্ষেত্রে ৮ শতাংশ এবং ক্যানসারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

শনাক্ত রোগী ২ লাখ ৬০ হাজার ছাড়াল

দেশে করোনায় নিশ্চিত আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বুলেটিনে জানানো হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৮৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৯০৭ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হলো ২ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত আরও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৩ হাজার ৪৩৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করল সরকার। দেশে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বিবেচনায় করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে মোট সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ জন। আক্রান্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, কারোনা সংক্রমণের লক্ষণ-উপসর্গ থাকলে তাঁরা অবশ্যই নমুনা পরীক্ষা করাবেন। এ ছাড়া কেউ ইতিমধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে থাকলে তাঁরও নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।