হঠাৎ এখানে-ওখানে জ্বলে ওঠে আগুন

আগুন। প্রতীকী ছবি
আগুন। প্রতীকী ছবি

হঠাৎ করেই আগুন জ্বলে ওঠে। কাপড়চোপড়, খড়ের স্তূপ, ঘরের ভেতরের আসবাবে আগুন ধরে যায়। তাই বাড়ির উঠানে, ঘরের বারান্দায় ড্রাম ও বালতির মধ্যে পানি রাখা। লোকজন পাহারায় থাকেন। কখনো কোথাও আগুন লাগলে যেন ছুটে গিয়ে নেভাতে পারেন।

২০ দিন ধরে এমন আগুন আতঙ্কে আছেন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সালমারা গ্রামের ছয়টি পরিবার। ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের সামনেও এ রকম ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি জানেন প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। কিন্তু কীভাবে কী হচ্ছে, কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না। ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের ধারণা, কোনো প্রকার গ্যাসের কারণে এমনটা হতে পারে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গ্রামের মাঝামাঝি ওই ছয়টি ঘরের অবস্থান। পাশাপাশি ছয়টি ঘরের মধ্যে তিনটি টিনের বেড়া ও চালার। বাকি তিনটি আধা পাকা টিনশেড ঘর। এসব ঘরের উঠানের এক পাশে আবার খড়ের ঘর। গোখাদ্যের জন্য এসব খড় স্তূপ করে রেখেছেন তাঁরা। কানু দে নামের একজনের বাড়ির উঠানের এক পাশে প্লাস্টিকের ড্রাম ও দুটি বালতিতে পানি রাখা।

এসব পরিবারের একাধিক নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০ দিন আগে হঠাৎ করেই দিনের বেলায় একটি খড়ের স্তূপে প্রথমে আগুন লাগে। লোকজন দ্রুত আগুন নেভান। এরপর ঘরের বারান্দা ও ভেতরে থাকা খাট, আলনা, শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, বিছানার চাদরসহ আসবাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে একের পর এক। বিষয়টি প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে জানান লোকজন। এরপর প্রশাসন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে জানালে তাঁরাও গ্রামে এসে বিষয়টি দেখে গেছেন। বিষয়টি বোঝার জন্য এক রাত সেখানে থেকেছেন ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। তাঁদের সামনেও হঠাৎ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।

গ্রামের বাসিন্দা রূপক দে (৩৫) বলেন, প্রথম দিকে এক সপ্তাহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে সকালের দিকে। মাঝখানে কয়েক দিন বন্ধ ছিল। এখন আবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ঘটনা ঘটছে বেশি। দিনে একাধিকবার আগুনের ঘটনা ঘটছে। এই কয়েক দিনে অন্তত ৪০ বার বিভিন্ন স্থানে ও জিসিনপত্রে আগুন ধরেছে। জীতেন্দ্র দে (৬৫) নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘এ রকম আজব ঘটনায় আমরা বিস্মিত, আতঙ্কিত। ভয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় ঘরের দরজা বন্ধ রাখছি। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। কিন্তু কীভাবে এসব ঘটনা ঘটছে, বুঝতে পারছি না। যারাই শুনছেন, অবাক হচ্ছেন।’

অঞ্জলি রানী দে (৬০) বলেন, ‘ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। কখন কী হয়, এই ভয়ে আছি।’ ভুক্তভোগী এক পরিবারের সদস্য সজীব দে (২৬)। তিনি পুলিশে চাকরি করেন। এখন বাড়িতে আছেন। তিনি বলেন, ‘এই অদ্ভুত ঘটনায় আমরা কী করব, বুঝতে পারছি না। সবার মাঝে চরম আতঙ্ক। প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন বলেছে যে গ্যাসের কোনো প্রতিক্রিয়ায় এটা হতে পারে। তবে তাঁরা নিশ্চিত নন।’

ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রণজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনে একাধিকবার ওই গ্রামে গিয়েছি। মানুষজন খড়ের স্তূপ, বিভিন্ন আসবাবে আগুন লাগার চিহ্ন দেখিয়েছেন। এখন পরিবারগুলো আতঙ্কে আছে।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিমাংশু রঞ্জন সিংহ বলেন, তাঁরা একাধিকবার সেখানে গেছেন। বিষয়টি বোঝার জন্য রাতে ছিলেন। তাঁদের সামনেও একবার আগুন লেগেছে। তবে কোনো ভারী বস্তুতে আগুন লাগে না। পাতলা কাপড়চোপড় বা জিনিসে আগুন লাগে। আগুন বেশি বড় হয় না। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা, কোনো গ্যাসের কারণে এমনটা হতে পারে। ওই বাড়িতে কয়েক মাস আগে নতুন একটি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকেও কিছু হতে পারে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি।’

জানতে চাইলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি। এসব পরিবারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনটি আমি এখনো হাতে পাইনি। পেলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বাপেক্সকে বিষয়টি জানাব।’