মদনে ট্রলারডুবির এক সপ্তাহেও মামলা হয়নি

নেত্রকোনার মদন উপজেলায় ট্রলার ডুবে ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা হয়নি। পুলিশের দাবি, মারা যাওয়া লোকজনের পরিবার বা স্বজনেরা মামলা করেননি বলে ট্রলারচালক শাহবাজ মিয়া (৩০) ও ট্রলারমালিক লাহুত মিয়াকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।

৫ আগস্ট রাজালিকান্দা হাওরে ট্রলারডুবির ঘটনাটি ঘটে।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রমিজুল হক বলেন, ‘এ ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবার বা স্বজনদের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই মামলা হয়নি। আর এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কাল বুধবার জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট দুপুরে ময়মনসিংহের কোনাপাড়া ও ভবানীপুর এলাকায় মাদ্রাসাশিক্ষক-ছাত্রদের ৪৮ জনের একটি দল মদনের উচিতপুর ট্রলারঘাটে আসে। পরে সেখান থেকে একটি ট্রলার ভাড়া নিয়ে হাওর ভ্রমণে বের হয়। ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী তোলায় ট্রলারটি রাজালিকান্দা হাওরে পৌঁছার পর বাতাস ও ঢেউয়ের কবলে পড়ে উল্টে যায়। এতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার সাত দিন চলে গেলেও আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে ট্রলার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। চার সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির প্রধান করা হয় মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদকে।
ইউএনও বুলবুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তকাজ এগোচ্ছে। সবার সঙ্গেই কথা বলা হচ্ছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা মামলার বিষয়ে কিছুটা সময় চাইছেন। এ ছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকেও তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৯ আগস্ট কমিটির লোকজনের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে।’
ওই দুর্ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি সভা করে উচিতপুর ট্রলারঘাট থেকে সুরক্ষাব্যবস্থা ছাড়া কোনো নৌযান চলতে পারবে না ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বড় নৌযানে সর্বোচ্চ ২০ জনের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছে।
তবে আজ দুপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাইফ জ্যাকেট, বয়া ইত্যাদি সুরক্ষাব্যবস্থা ছাড়াই ছোট-বড় নৌযানে পর্যটক পরিবহন করা হচ্ছে। আর প্রশাসনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাও চালকেরা তেমন মানছেন না।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর আগে মদন থেকে খালিয়াজুরি পর্যন্ত নির্মিত ডুবো সড়কের উচিতপুর ট্রলার ঘাটসংলগ্ন বালই নামের স্থানে একটি দৃষ্টিনন্দন পাকা সেতু নির্মাণ করার পর ওই এলাকাটি ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণীয় জায়গায় পরিণত হয়। হাওরের সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে বর্ষার পানিতে। প্রতিবছর বর্ষার পানি আসার পর সেখানে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় হয়। এ বছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও সেখানে পর্যাপ্ত মানুষের ভিড় দেখা গেছে। জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে সেখানে।
হাওর এলাকাটিতে ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক নৌযান চলাচল করে। কোনো কোনো নৌকায় কোনো রকম ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই একটি শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হয়। কোনো সুরক্ষাসামগ্রীও রাখা হয় না।
এ বছর উচিতপুর এলাকার খায়রুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে উচিতপুর ট্রলার ঘাটটি পরিচালনা করছেন। কিন্তু নৌযানগুলো থেকে দৈনিক ইজারামূল্য আদায় ছাড়া ঘাট পরিচালনায় ইজারাদারের পক্ষ থেকে কোনো নজরদারি ছিল না। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনেরও নজরদারির অভাব ছিল।
ইজারাদার খায়রুল ইসলাম জানান, গতকাল ইজারাদার ও নৌকার মালিকদের পক্ষ থেকে ৫০টি লাইফ জ্যাকেট ও ১০০ টিউব বিতরণ করা হয়েছে। আরও বেশ কিছু সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
ইউএনও বুলবুল আহমেদ বলেন, প্রশাসনের নজরদারি নেই, এমন বলা যাবে না। ওই ঘাটে সতর্ক বার্তাসহ প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজরদারি ছিল।